অমর একুশে গ্রন্থমেলা, প্রতি বছর ফেব্রুয়ারি মাস জুড়ে এই মেলা অনুষ্ঠিত হয়।
প্রেক্ষাপটঃ ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দের ফেব্রুয়ারি মাসের ২১ তারিখ বাংলা ভাষার জন্য আত্মোৎসর্গের স্মৃতিচারন।
শুরুঃ ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দের ৮ ফেব্রুয়ারি।
উদ্যোক্তাঃ চিত্তরঞ্জন সাহা।
স্থানঃ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন বর্ধমান হাউজ প্রাঙ্গনের বটতলা।
বাংলা একাডেমীঃ ১৯৭৮ খ্রিস্টাব্দে বাংলা একাডেমীর তৎকালীন মহাপরিচালক আশরাফ সিদ্দিকী বাংলা একাডেমীকে মেলার সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত করেন।
বাংলাদেশ পুস্তক বিক্রেতা ও প্রকাশক সমিতিঃ ১৯৭৯ খ্রিস্টাব্দে মেলার সাথে যুক্ত হয় বাংলাদেশ পুস্তক বিক্রেতা ও প্রকাশক সমিতি; এই সংস্থাটিও প্রতিষ্ঠা করেছিলেন চিত্তরঞ্জন সাহা।
অমর একুশে গ্রন্থমেলা নামকরনঃ ১৯৮৩ সালে কাজী মনজুরে মওলা বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হিসেবে বাংলা একাডেমিতে প্রথম “অমর একুশে গ্রন্থমেলা”র আয়োজন সম্পন্ন করেন।
প্রথমবারের মত সফল একুশে বইমেলাঃ ১৯৮৪ সালে সাড়ম্বরে বর্তমানের অমর একুশে গ্রন্থমেলার সূচনা হয়।
সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ঃ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় মেলা নিয়ন্ত্রণের যাবতীয় দায়িত্ব পালন করে। প্রকাশনীসমূহের স্টলগুলো প্রকাশক এলাকা, প্রকাশক-বিক্রেতা এলাকা, শিশু কর্ণার, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এবং লিটল ম্যাগাজিন, ক্যান্টিন, আড্ডার স্থান, লেখক ও পাঠক সমাবেশ ইত্যাদি এলাকায় বিভাজন করে স্থান দেয়া হয়।
মেলার অন্যন্য উপাদানসমুহঃ মেলা চত্বরকে ভাষা শহীদ সালাম, রফিক, জব্বার, বরকত, শফিউর এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ, আব্দুল করিম সাহিত্য বিশারদ প্রমুখ ব্যক্তিত্বের নামে ভাগ করা হয়।
বিদেশী প্রকাশনা সংস্থাঃ এই মেলায় দেশের খ্যাতনামা সব প্রকাশনী, বই বিক্রেতা ছাড়াও দেশের বাইরে, যেমন ভারত, রাশিয়া, জাপান প্রভৃতি দেশ থেকেও নানা প্রকাশনা সংস্থা তাঁদের বই ও প্রকাশনা নিয়ে অংশগ্রহণ করেন।
অন্যন্য প্রতিষ্ঠানঃ একুশের বই মেলায় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারেরও বহু রাষ্ট্রায়ত্ব প্রতিষ্ঠান, যেমন: বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন, বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর ইত্যাদি তাদের স্টল নিয়ে মেলায় অংশগ্রহণ করে। এছাড়া বিভিন্ন বেসরকারি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন ডিজিটাল প্রকাশনা যেমন সিডি, ডিভিডি, বিভিন্ন মোবাইল ফোন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান, লিটল ম্যাগাজিন। মেলার মিডিয়া সেন্টারে থাকে ইন্টারনেট ও ফ্যাক্স ব্যবহারের সুবিধা। এছাড়া থাকে লেখক কর্ণার এবং তথ্যকেন্দ্র।
অন্যন্য বৈশিষ্ট্যঃ মেলা প্রাঙ্গন পলিথিন ও ধূমপানমুক্ত। মেলায় বইয়ের বিক্রয়ে ২০-২৫ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় থাকে। এছাড়া মেলায় শিক্ষাসহায়ক পরিবেশ ও তথ্যের নিরাপত্তার জন্য বিশেষ টাস্কফোর্স রাখা হয়।
প্রবেশসীমাঃ মেলায় প্রবেশের জন্য ছুটির দিন ও ছুটির দিন বাদে অন্যান্য দিন আলাদা প্রবেশ সময় থাকে। মেলায় প্রবেশের জন্য কোনো প্রবেশ ফি ধার্য করা হয় না। বিকাল তিনটে থেকে রাত আটটা পর্যন্ত এই মেলা চলে।
বিনোদন ব্যবস্থাঃ মেলা চলাকালীন প্রতিদিনই মেলাতে বিভিন্ন আলোচনা সভা, কবিতা পাঠের আসর বসে; প্রতি সন্ধ্যায় থাকে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এছাড়া মেলাতে লেখককুঞ্জ রয়েছে, যেখানে লেখকেরা উপস্থিত থাকেন এবং তাঁদের বইয়ের ব্যাপারে পাঠক ও দর্শকদের সাথে মতবিনিময় করেন। এছাড়া মেলার তথ্যকেন্দ্র থেকে প্রতিনিয়ত নতুন মোড়ক উন্মোচিত বইগুলোর নাম, তদীয় লেখক ও প্রকাশকের নাম ঘোষণা করা হয় ও দৈনিক প্রকাশিত বইয়ের সামগ্রিক তালিকা লিপিবদ্ধ করা হয়। এছাড়া বিভিন্ন রেডিও ও টেলিভিশন চ্যানেল মেলার মিডিয়া স্পন্সর হয়ে মেলার তাৎক্ষণিক খবরাখবর দর্শক-শ্রোতাদেরকে অবহিত করে। এছাড়াও মেলার প্রবেশদ্বারের পাশেই স্টল স্থাপন করে বিভিন্ন রক্ত সংগ্রাহক প্রতিষ্ঠান স্বেচ্ছাসেবার ভিত্তিতে রক্ত সংগ্রহ করে থাকে।
২০১৪ ইং সালের একুশে বইমেলার ভিন্নতাঃ এবারের বই মেলা বাংলা একাডেমী প্রাঙ্গন ছাড়িয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেও বিস্তৃত করা হয়েছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ তৈরীর লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ প্রকল্প এক্সেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) প্রকল্প একটি স্টল নিয়ে মেলায় আগত দর্শনার্থীদের তথ্য সুবিধা দিয়ে আসছে। এবং মেলাতে ওয়াই-ফাই সুবিধা থাকায় দর্শনার্থীদের সাথে বহনকৃত মোবাইল ফোন, ট্যাবলেট, নোটবুক কিংবা ল্যাপটপে ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ থাকছে, এর জন্য কোন প্রকার চার্জ পরিশোধ করার প্রয়োজন নেই।
তথ্য সুত্রঃ একুশে বই মেলা ঘুরে এসে এবং উইকিপিডিয়া অবলম্বনে।