ডেস্ক: মানুষ কেমন করে বুদ্ধিমান প্রাণী হল, সে রহস্য অবশেষে ভেদ করা গিয়েছে বলে নতুন এক গবেষণার ভিত্তিতে মনে করছেন একদল বিজ্ঞানী। যুক্তরাজ্যের এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীদের গবেষণার ভিত্তিতে এক প্রতিবেদনে এই সময় জানিয়েছে, ৫০ কোটি বছর আগে জিনের সেই দুর্ঘটনাটি ঘটেছিল।
এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক জানিয়েছেন, ৫০ কোটি বছর আগে জিনের এক ‘দুর্ঘটনা’র ফলেই মানুষের যুক্তি দিয়ে ভাবনাচিন্তা করার ক্ষমতা জন্মেছিল। অন্য স্তন্যপায়ী প্রাণীদেরও বুদ্ধির উৎস এটাই। ওই গবেষক দলের বক্তব্য, বিবর্তনের পথে আমাদের পুর্বপুরুষদের মস্তিষ্কে জিনের সংখ্যা হঠাৎ বেড়ে যাওয়ার কারণেই তাদের পরবর্তী প্রজন্ম অর্থাৎ আমরা বুদ্ধিমান হয়ে উঠেছি। আর সবচেয়ে অদ্ভুত ব্যাপার যেটা, তা হল- যে জিনগুলো আমাদের মানসিক সক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করেছে, সেগুলোর জন্যই আবার নানা মস্তিষ্কের সমস্যায় আক্রান্ত হই আমরা।
দীর্ঘ গবেষণায় জানা গিয়েছে, প্রায় পাঁচ কোটি বছর আগে সমুদ্রে বসবাসকারী অতি সরল কোনো এক অমেরুদণ্ডী প্রাণীর শরীরে এমন একটা জিনের দুর্ঘটনা ঘটেছিল। এর ফলে মস্তিষ্কের বিভিন্ন জিনের একাধিক প্রতিলিপি (কপি) তৈরি হয়ে যায়। আর ওই প্রাণীটির পরবর্তী প্রজন্ম সেই জিনগুলোর সুফল লাভ করে। ওই পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে রয়েছে আধুনিক মানুষসহ বিভিন্ন জটিল গঠনসম্পন্ন মেরুদণ্ডী প্রাণীও।
বিজ্ঞানীদলের দাবি, মানুষের নানা ধরনের ব্যবহারিক অভ্যাসের মূলে রয়েছে ওই জিনের দুর্ঘটনাই। প্রধান গবেষক অধ্যাপক সেথ গ্রান্টের কথায়, ক্রমবিবর্তনের পথে মানুষের জটিল ব্যবহার কী ভাবে এল সেটা খুঁজে বের করাটা ছিল বিরাট চ্যালেঞ্জ।’ বিজ্ঞানপত্রিকা ‘নেচার নিউরোসায়েন্স’-এ এই নতুন সমীক্ষাটি দুটি গবেষণাপত্রে প্রকাশিত হয়েছে। বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে মস্তিষ্কের বিভিন্ন রোগসৃষ্টির সম্পর্কটা ঠিক কেমন, এই গবেষণাপত্রে তারও একটা দিকনির্দেশ রয়েছে বলে দাবি। যে সংস্থা এই সমীক্ষার জন্য অর্থ জুগিয়েছে, তার তরফে জন উইলিয়ামস জানিয়েছেন, ‘মানসিক রোগের চিকিৎসার ক্ষেত্রে এই গবেষণা নতুন আলো দেখাবে।’
মানুষ এবং ইঁদুরের মধ্যে বুদ্ধিমত্তার তুলনামূলক সমীক্ষা করে বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, দুই প্রাণীর বুদ্ধিমত্তা নিয়ন্ত্রণ করে একটাই মাত্র জিন৷ যেসব কাজে মাথা খাটাতে হয় বেশি, মানুষ ও ইঁদুরের ক্ষেত্রে একই জিন সেগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করে। এই জিনগুলোর পরিবর্তন করে দেওয়া হলে বা কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলে, জটিল কাজ করার ক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায়।
গ্রান্ট আরো বলেছেন, আমাদের সমীক্ষায় এটা পরিষ্কার বোঝা যায় যে, অত্যধিক বুদ্ধিমত্তা এবং জটিল ব্যবহারের অবধারিত ফলাফল হল মানসিক সমস্যা। সমীক্ষার অন্যতম গবেষক কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক টিম বুসি বলেছেন, মানসিক রোগীদের এ বার শুধু ওষুধ নয়, জিনবদলের মাধ্যমেও চিকিৎসা করার চেষ্টা করা যেতে পারে।
