দ্রুতই ‘গ্রামীনফোনকে পেছনে ফেলে এবার একলাফে দেশের সেরা বৃহত্তম নেটওয়ার্ক হচ্ছে রবি’ !

অনলাইন আপডেট : সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী  ষোল কোটি জনসংখ্যার বাংলাদেশে মানুষের হাতে থাকা মোবাইল সিমের সংখ্যা এখন ১৩ কোটি ছাড়িয়েছে। এদের মধ্যে ইন্টারনেট সেবা নিচ্ছেন সোয়া ৫ কোটি গ্রাহক।

২০১৫ সালের জুলাই নাগাদ প্রধান মোবাইল অপারেটর গ্রামীণফোনের গ্রাহক সংখ্যা ছিল ৫ কোটি ৩৯ লাখ, বাংলালিংকের ৩ কোটি ২৪ লাখ, রবির ২ কোটি ৭৯ লাখ, এয়ারটেলের ৯০ লাখ, সিটিসেলের ১১ লাখ ৬১ হাজার ও রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিটকের গ্রাহক ৪২ লাখ ২১ হাজার।

প্রতিযোগিতার বাজারে গ্রাহকদের নিজ নিজ সেবার দিকে টানতে প্রতিটি মোবাইল কোম্পানীগুলো  বাড়াচ্ছে একের পর এক নানান সুবিধা। তবে দেশের বৃহত্তম মোবাইল নেটওয়ার্ক  গ্রামীনফোনের সারাদেশজুড়ে নেটওয়ার্কের মান ভালো হলেও অন্যান্য বিভিন্ন সেবা নিয়ে সাধারন গ্রাহকদের অভিযোগের মাত্রাটা তাদের বিরুদ্ধেই  অনেক বেশি। সেই তুলনায় বাংলালিংক ও রবি তাদের  গ্রাহকদের সন্তুষ্টি অর্জনেতুলনামুলকভাবে ভাবে কিছুটা হলেও বেশি সফল হয়েছে। অন্যদিকে দেশের চতুর্থ বৃহত্তম নেটওয়ার্ক এয়ারটেল এখন নতুনভাবে নিজেদের উপস্থাপনে নজর কাড়ছে তরুন প্রজন্মের গ্রাহকদের।

এমনি অবস্থায় দেশের তৃতীয় ও চতুর্থ দুই মোবাইল কোম্পানী এবার একিভুত হতে চলেছে।  মোবাইল অপারেটর রবি ও এয়ারটেল ব্যবসায়িক কার্যক্রম একীভূত করতে আনুষ্ঠানিক চুক্তি সই করেছে ইতমধ্যে । আর এই একিভুতকরনের মধ্য দিয়েই এয়ারটেল নামটি বিলুপ্ত হচ্ছে। এয়ারটেলের গ্রাহকেরা স্বয়ংক্রিয় ভাবেই  যুক্ত হয়ে যাবেন রবিতে।
এয়ারটেলের গ্রাহকেরা রবিতে কনভার্ট হলে অনুমিতভাবেই দেশের বৃহত্তম নেটওয়ার্ক যে রবি হবে তাতে সন্দেহ নেই।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মোবাইল অপারেটর রবির পক্ষ থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে রবি ও এয়ারটেলের মূল বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান আজিয়াটা গ্রুপ বারহাদ (আজিয়াটা) ও ভারতী এয়ারটেল লিমিটেডের (ভারতী) মধ্যে বৃহস্পতিবার (২৮ জানুয়ারি)  এই চুক্তি হয়েছে।
২০১৫ সালের ৯ সেপ্টেম্বর দুই কোম্পানির তরফ থেকে বাংলাদেশে ব্যবসায়িক কার্যক্রম একীভূত করার সম্ভাবনার বিষয়ে একান্ত আলোচনা শুরুর ঘোষণা দেওয়ার পর এই চুক্তি হলো বলেও জানানো হয় ঐ বিজ্ঞপ্তিতে ।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ‘একীভূতকরণের পর, দুই কোম্পানির একীভূত সত্তা রবি নামেই ব্যবসা পরিচালনা করবে এবং একীভূত সত্তার গ্রাহক সংখ্যা দাঁড়াবে প্রায় ৪ কোটিতে; যেটি হবে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহৎ মোবাইল অপারেটর। আর আজিয়াটা একীভূত সত্তার ৬৮ দশমিক ৩ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করবে। অন্যদিকে ভারতী ২৫ শতাংশ এবং বাকি ৬ দশমিক ৭ শতাংশ অপর শেয়ারহোল্ডার জাপানের এনটিটি ডকোমোর কাছে থাকবে।’
ওই বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, ‘এই চুক্তির কার্যকারিতা টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ- বিটিআরসি, সরকার এবং মহামান্য আদালতের অনুমোদন পাওয়ার ওপর নির্ভরশীল। এই প্রক্রিয়া আগামী দুই মাসের মধ্যে সম্পন্ন হবে বলে আশা করা হচ্ছে।’
১৯৯৭ সালে ‘একটেল’ নামে বাংলাদেশে যাত্রা শুরু করে ‘রবি’। বাংলাদেশের শিল্প গোষ্ঠী ‘একে খান গ্রুপ’ ও ‘টেলিকম মালয়েশিয়ার’ যৌথ অংশীদারি কোম্পানি ছিল ‘একটেল’; ২০০৯ সালে আজিয়াটার কাছে মালিকানা বিক্রি করে দেয় তারা। পরে ২০১০ সালের ২৮ মার্চ ‘রবি’ নামে বাংলাদেশে ব্যবসা শুরু করে ‘রবি আজিয়াটা লিমিটেড’। এতে মালয়েশিয়ার ‘আজিয়াটা গ্রুপ বারহাদ’-এর শেয়ারের পরিমাণ ৯২ শতাংশ ও জাপানের ‘এনটিটি ডোকোমোর’ শেয়ারের পরিমাণ ৮ শতাংশ।
২০১০ সালে ‘ওয়ারিদ টেলিকমের’ ৭০ শতাংশ শেয়ার এক লাখ ডলারের বিনিময়ে কিনে নিয়ে ‘এয়ারটেল বাংলাদেশ’ নামে ব্যবসা শুরু করে ‘ভারতী এয়ারটেল’। পরে ২০১৩ সালে ৮ কোটি ৫০ লাখ ডলারের বিনিময়ে বাকি ৩০ শতাংশও কিনে নেয় ‘ভারতী এয়ারটেল।’
দুই কোম্পানি একীভূত হলে বাংলাদেশের গ্রাহকদের আরও সাশ্রয়ী মূল্যে টেলিযোগাযোগ ও উচ্চগতির মোবাইল ইন্টারনেট সেবা পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হবে বলেও সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে।
‘রবির’ প্রধান নির্বাহী সুপুন বীরাসিংহের বরাতে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশের বর্তমান অসম প্রতিদ্বন্দ্বিতা এবং প্রতিযোগী বহুল টেলিকমিউনিকেশন খাতে একীভূতকরণ অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। আমরা মনে করি, এই একীভূতকরণের মাধ্যমে আজিয়াটা এবং ভারতী এয়ারটেল উভয়েই বর্ধিত আকার এবং দক্ষতার ফলশ্রুতিতে ব্যয় সংকোচনের সুবিধা পাবে। পাশাপাশি, এর ফলে কর্মকৌশলের সর্বোচ্চ বাস্তবায়ন এবং গ্রাহকদের আরো সাশ্রয়ী সেবা দেওয়ার লক্ষ্যে যেকোন বিনিয়োগে এই খাতের দুই শীর্ষস্থানীয় অপারেটর তাদের সম্মিলিত ক্ষমতা কাজে লাগাতে পারবে যা এই শিল্পের সার্বিক কল্যাণ সাধন করবে এবং জাতীয় অর্থনীতিতে আরও গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সামনের দিনগুলোতে গ্রাহকদের সাশ্রয়ী মূল্যে সবচেয়ে সেরা মোবাইল ও ব্রডব্যান্ড অফার দেওয়ার লক্ষ্যে রবি এবং এয়ারটেলের সমন্বিত শক্তিকে কাজে লাগানো হবে। আমরা বিশ্বাস করি, এই একীভূতকরণ গ্রাহকদের জন্যে বড় ধরনের পার্থক্য সৃষ্টি করবে এবং তাদের জন্যে সবচেয়ে লাভজনক প্রস্তাবনা দেওয়া সম্ভব হবে।’
আজিয়াটার প্রেসিডেন্ট ও গ্রুপের প্রধান নির্বাহী দাতোশ্রী জামালুদ্দিন ইব্রাহিমের বরাতে ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘আজিয়াটার একীভূতকরণ এবং আত্মীকরণ কৌশলের সঙ্গে সমন্বয় রেখে বিভিন্ন দেশে আমরা নিজেদের অবস্থান জোরদার এবং দীর্ঘমেয়াদী প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করতে এ ধরনের একীভূতকরণে সর্বোচ্চ মনোযোগ দিয়েছি। ইন্দোনেশিয়া, শ্রীলঙ্কা এবং কম্বোডিয়ার মত বাজারে এ ধরনের একীভূতকরণ এবং আত্মীকরণে আমাদের সাফল্য বাংলাদেশের বাজারেও একীভূতকরণে আজিয়াটার নেতৃত্বদানের যৌক্তিকতা প্রমাণ করে।’
বাংলাদেশ ছাড়াও মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, শ্রীলঙ্কা এবং কম্বোডিয়ার মোবাইল অপারেটর কোম্পানিগুলোতে এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানি আজিয়াটার সিংহভাগ শেয়ার রয়েছে। এছাড়া ভারত ও সিঙ্গাপুরে কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ শেয়ার রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির। গ্রুপের সহযোগী ও নিয়ন্ত্রণাধীন মোবাইল অপারেটরেরা বাংলাদেশে ‘রবি’, মালয়েশিয়ায় ‘সেলকম’, ভারতে ‘আইডিয়া’, ইন্দোনেশিয়ায় ‘এক্সএল’, শ্রীলঙ্কায় ‘ডায়ালগ’, কম্বোডিয়ায় ‘স্মার্ট’ এবং সিঙ্গাপুরে ‘এমওয়ান’ নামে তাদের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে।
আর ভারতী এয়াটেলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও (ভারত ও দক্ষিণ এশিয়া) গোপাল ভিত্তাল বলেন, ‘দুটি কোম্পানির শক্তিকে একত্রিত করার পেছনে অত্যন্ত যৌক্তিক কারণ রয়েছে। একীভূত এই সত্তা তার কার্যক্রমের সমন্বয় ঘটিয়ে গ্রাহকদের বিশ্বমানের আরো ভালো সেবা দিতে সক্ষম হবে এবং বাংলাদেশের টেলিযোগাযোগ খাতের উন্নয়নে অবদান রাখতে পারবে।’
Facebook
Twitter
WhatsApp