নিউজ ডেস্ক : কানাডার প্রকৌশলীরা এমন এক ‘চিবুক চাবুক’ উদ্ভাবন করেছেন যা থেকে তৈরি হবে বিদ্যুৎ। কোনো কিছু চিবুলেই যন্ত্রটি চার্জিত হবে। ইয়ারপিস বা এ রকম শ্রবণ সহায়ক যন্ত্রে যে ব্যাটারি ব্যবহার করা হয় একদিন সেই ব্যাটারির জায়গা দখল করবে নতুন এই প্রযুক্তি।
স্মার্ট ম্যাটেরিয়ালস অ্যান্ড স্ট্রাকচার্স জার্নালে এই বিদ্যুৎ উৎপাদী চাবুক নিয়ে গবেষণা প্রবন্ধও প্রকাশিত হয়েছে।
যন্ত্রটির উদ্ভাবক ড. এইডিন ডেলনাভাজ ও ড. জেরেমি ভয়েক্স। দুজনেই যন্ত্র প্রকৌশলী। কানাডার মনট্রিলে ইকোলে ডি টেকনোলজি সুপিরিয়রের এই দুই প্রযুক্তিবিদ বলেছেন, চোয়াল নাড়ালেই বিদ্যুৎ উৎপন্ন করবে তাদের যন্ত্রটি।
শ্রবণ-প্রযুক্তি নিয়ে বহুদিন ধরে গবেষণা করেন ডেলনাভাজ ও ভয়েক্স- এই জুটি। ভয়েক্স বলেছেন, ‘শ্রবণ সহায়ক প্রযুক্তির জন্য আমরা প্রায় সব রকমের প্রাকৃতিক শক্তি নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছি।’
দুয়েকটা উদাহরণ নেওয়া যাক।
আমাদের কানের ভেতর কিন্তু গরম থাকে। এই তাপকেও বিদ্যুতে রূপান্তরিত করার প্রযুক্তি তৈরি করেছেন কানাডার যন্ত্রকৌশলী-জুটি। একই ভাবে তারা মাথার নড়াচড়া থেকে বিদ্যুৎ তৈরির পথ আবিষ্কার করেছেন।
তারা ‘স্বয়ংক্রিয় হাতঘড়ি’ও আবিষ্কার করেন। চার্জ শেষ হওয়ার আগে শুধু মোচড় দিলেই এই ঘড়ি ফের পুরোদমে চার্জিত হয়ে যাবে।
নতুন প্রযুক্তি নিয়ে ভয়েক্স বলেছেন, ‘আপনি যখন চোয়াল নড়াচড়া করবেন, তখন খেয়াল করুন- সবেচেয় বেশি নড়াচড়া করছে আপনার চিবুক।’
ভয়েক্স ও ডেলনাভাজ তখন সিদ্ধান্ত নেন, ‘চিবুকের গতিশক্তি থেকে বিদ্যুৎ আহরণ করার যন্ত্র তৈরি করব।’
তারা চাবুকের মতো সরু একটা যন্ত্র তৈরি করলেন। এই চাবুককে চিবুকের সঙ্গে লাগিয়ে দিতে হবে। এরপর কোনো কিছু চাবালে, যেমন চিউয়িং গাম, চিবুক ওঠানামা করবে। আর এই ওঠানামার গতিশক্তিকে বিদ্যুৎশক্তিতে বদলে নেবে ডিজিটাল চাবুক।
বিজ্ঞানের ভাষায় এভাবে বিদ্যুৎ তৈরির পন্থাকে পিজোইলেকট্রিক ইফেক্ট বলা হয়। পিজো একটি গ্রিক শব্দ। এর অর্থ চাপ দেওয়া। তার মানে, পিজোইলেকট্রিক ইফেক্ট হলো সেই প্রক্রিয়া যার সাহায্যে কোনো কিছুকে চাপ দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপন্ন করা যায়।
তাদের উদ্ভাবিত ডিজিটাল চাবুক যে সত্যিই কাজ করবে তা যাচাই করতে নিজেদেরই ওপর প্রথমে পরীক্ষা চালান ভয়েক্স ও ডেলনাভাজ।
ডেলনাভাজের চিবুকে সেট করা হয় যন্ত্রটি। এরপর এক মিনিট চিউয়িং গাম চিবান ডেলনাভাজ। এতে ১৮ মাইক্রোওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয়।
ক্ষমতা পরিমাপের একক ওয়াট। এক ওয়াটের ১০ লাখ ভাগের এক ভাগকে বলা হয় এক মাইক্রোওয়াট।
ফলে ১৮ মাইক্রোওয়াট হয়ত তেমন কোনো সাফল্য নয়। এমনকি শ্রবণসহায়ক যন্ত্রগুলোর জন্য এর ২০ গুণ ক্ষমতার বিদ্যুৎ দরকার হয়। তবে ডেলনাভাজ বলেছেন, ‘পিজোইলেকট্রিক বস্তুর পরিমাণ বাড়িয়ে এই যন্ত্র দিয়েই দরকারি বিদ্যুৎ উৎপন্ন করা সম্ভব হবে।’
কিন্তু বেশি পরিমাণে পিজোইলেকট্রিক বস্তু ব্যবহার করলে তো চাবুক মোটা হয়ে যাবে।
তা ঠিক, তবে তা উল্লেখ করার মতো নয়। যেমন, ২০টি পিকোইলেকট্রিক স্তর মিলে মোট ৬ মিলিমিটার পুরুত্ব তৈরি হবে। এরকম পুরু একটা চাবুক দিয়ে ২০০ মাইক্রোওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎ তৈরি করা সম্ভব।
এবার কানাডার এই প্রযুক্তির সম্ভাব্য বাঙালি ব্যবহার কল্পনা করুন। যারা পান খান বেশি তাদের কথাটা ভাবুন। পাছে না তারা বিদ্যুৎ রফতানি করার প্রকল্প খুলে বসেন! কিংবা ধরুন, যারা হকার কিংবা যারা বাচাল- তাদের দামও বেড়ে যাবে এই দেশে! কারণ যত বেশি চিবুক নড়বে তত বেশি বিদ্যুৎ তৈরি করবে ডিজিটাল চাবুক।