কৃত্রিম “পাতা” তৈরির পথে আরও একধাপ এগিয়ে গেলেন বিজ্ঞানীরা

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি : প্রতিনিয়ত নতুন নতুন শক্তির উৎস খুঁজে বেরাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা, কারণ শক্তি ছাড়া যে বর্তমানের আধুনিক সভ্যতা অচল! এ কারণে খুব কার্যকর জ্বালানি হিসেবে হাইড্রোজেন ফুয়েল ব্যবহারের চিন্তা তাদের বহুদিনের। কিন্তু বিশুদ্ধ হাইড্রোজেন তো মুক্ত অবস্থায় প্রকৃতিতে পাওয়া যায় না মোটেই, তার পাশাপাশি এর উৎপাদনটাও প্রচন্ড খরুচে। তবে কি হাইড্রোজেন ফুয়েলের বিপুল পরিমাণ শক্তি তৈরির ক্ষমতা মানুষের ধরাছোঁয়ার বাইরেই রয়ে যাবে?

না, বিজ্ঞানীরা মোটেই সেটা হতে দেবেন না। তাই তো তারা বের করে ফেলেছেন এমন একটি উপায় যাতে পরিচ্ছন্ন শক্তির উৎস হিসেবে হাইড্রোজেন ফুয়েল ব্যবহার করা যেতে পারে। আর সেই কাজে তাদের সাহায্য করছে কৃত্রিম “পাতা”! কী করতে পারে এই পাতা? একেবারে জলজ্যান্ত সজীব-সবুজ পাতার মতোই তা সৌর শক্তিকে কাজে লাগিয়ে পানি থেকে তৈরি করে ফেলতে পারে বিশুদ্ধ হাইড্রোজেন এবং অক্সিজেন। এই প্রক্রিয়াটি যেমন সরল, তেমনি তা পরিবেশের জন্য নিরাপদ এবং একই সাথে বেশ সস্তাও বটে।

অ্যারিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটি (ASU) এবং অ্যারিগন ন্যাশনাল ল্যাবরেটরির এসব বিজ্ঞানীরা প্রকৃতির থেকে পাঠ নিয়েই এই প্রযুক্তি বের করেছেন। যেভাবে একদম সাধারণ একটি পাতা সালোকসংশ্লেষণের মাধ্যমে পানি ভেঙে অক্সিজেন এবং হাইড্রোজেন তৈরি করে ফেলে, তেমনিভাবেই নিজেদের এই উদ্ভাবনকে চালিত করার চেষ্টা করেন তারা।

“প্রাথমিক অবস্থায় আমাদের এই কৃত্রিম পাতা খুব একটা ভালো কাজ করছিলো না। এর কারণ খুঁজতে গিয়ে আমরা দেখি, একটা দ্রুতগতির বিক্রিয়ার সাথে একটি ধীরগতির বিক্রিয়া ঠিক খাপ খাচ্ছিলো না,” বলেন ASU এর রসায়নের অধ্যাপক টমাস মুর। দ্রুতগতির বিক্রিয়াটি হলো সেটা যেখানে আলোর শক্তি রূপান্তরিত হয় রাসায়নিক শক্তিতে, আর ধীরগতির বিক্রিয়াটি হলো সেটা যেখানে রাসায়নিক শক্তি ব্যবহার করে পানি ভেঙে অক্সিজেন এবং হাইড্রোজেন তৈরি হয়। প্রকৃতিতে এই দুই বিক্রিয়ার মাঝে রয়েছে একটি মাধ্যমিক ধাপ, যেখানে দুই গুচ্ছ ইলেকট্রন কাজ করে। এক গুচ্ছ কাজ করে প্রথম বিক্রিয়ার জন্য আর আরেক গুচ্ছ কাজ করে দ্বিতীয় বিক্রিয়ার জন্য। বিজ্ঞানীদের বেশ কিছু মাথা ঘামানোর পরে কৃত্রিম পাতার এই প্রক্রিয়াটিকে আরও কার্যকর এবং আসল পাতায় যেমন হয়, অনেকটাই সে ধরনের করে তোলা সম্ভব হয়।

বিজ্ঞানীদের মতে, এভাবে তৈরি বিশুদ্ধ হাইড্রোজেন ব্যবহার করে মহাকাশযান, উচ্চ ক্ষমতার এঞ্জিন এমনকি সাধারণ বাণিজ্যিক যানবাহন চালানো সম্ভব হবে। হাইড্রোজেন এমন একটি পরিবেশবান্ধব জ্বালানি যা জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর আমাদের নির্ভরশীলতা কমিয়ে আনতে সক্ষম। এটা সহজে তৈরি করা যাবে এবং তৈরি করবে না কোনো দূষণ বা গ্রিনহাউজ গ্যাস। আর এর ওপর ভিত্তি করে আধুনিক হাইড্রোজেন চালিত যানবাহন তৈরি করাও শুরু হতে পারে বেশ বড় সংখ্যায়।

Facebook
Twitter
WhatsApp