ভিকটিম মরে যাওয়ার আগেই হত্যা মামলা দিয়ে ইতিহাস গড়লো পুলিশ!

ডেস্ক: লন্ডনে ছুরিকাঘাতে আহত এক ব্যক্তির মৃত্যু হওয়ার আগেই হামলাকারী তিন তরুণের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দয়ের করে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড মঙ্গলবার এক বিরল ইতিহাসের জন্ম দিয়েছে।

গত রোববার লন্ডনের আপটন পার্কে রশিদ নাইম নামের এক ব্যক্তিকে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে ১৪ থেকে ১৬ বছর বয়সী তিন তরুণ। আহত নাইমকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকরা জানান, আহত নাইমের অবস্থা গুরুতর এবং যে কোনো সময় তিনি মারা যেতে পারে। এ কথা শুনেই গোয়েন্দা পুলিশ ওই তিন তরুণের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ দায়ের করেন। মামলা করার কয়েক ঘণ্টা পর অবশ্য নাইম মারা যান।

পরে এক বিবৃতিতে পুলিশ জানায়, ‘আজ সকালে (মঙ্গলবার) মি. নাইম রয়েল লন্ডন হাসপাতালে মারা গেছেন। নির্ধারিত সময়ে লাশের ময়না তদন্ত করা হবে।’

নাইম হত্যা মামলায় মঙ্গলবার বিকেলে তিন অভিযুক্তকে এক কিশোর আদালতে হাজির করা হয়। বৃহস্পতিবার মমলার শুনানির তারিখ নির্ধারণ করেছেন বিচারক।

নইম লন্ডনের কুইন্স মার্কেটে একটি মোবাইল ফোনের দোকান চালাতেন। পুলিশের ধারণা ছিনতাই করার সময় তিন কিশোরের সঙ্গে তার ধস্তাধস্তি হয়। এক পর্যায়ে তারা তাকে ছুরি দিয়ে আঘাত করে। গত পাঁচ বছর আগে প্রায় একই ধরনের একটি ঘটনা ঘটেছিল যুক্তরাজ্যে। এপ্রিল জোনস নামের এক নারীর লাশ না পাওয়া সত্ত্বেও হত্যা মমলা দয়ের করেছিল পুলিশ। এখন অব্দি নিহতের লাশ পাওয়া যায়নি।

তবে কেউ মারা যাওয়ার আগেই তাকে নিহত উল্লেখ করে আসামির বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়েরের ঘটনা যুক্তরাজ্যের আইনি ইতিহাসে এটিই প্রথম। স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড বলছে, তারা ন্যায়বিচারের উদ্দেশ্যে ওই তিন তরুণের বিরুদ্ধে আগেভাগেই হত্যা মামলা দায়ের করেছে।

কিন্তু যুক্তরাজ্যে শত শত বছর ধরে প্রচলিত আইন অনুযায়ী, কেউ নিহত হওয়া এবং তার লাশ হাতে পাওয়ার পরই কেবল কেবল হত্যা মামলা দায়ের করা হতে পারে। সতেরো শতকে হত্যার অভিযোগে বেশ কয়েকজনকে ফাঁসি দেয়া হয়। কিন্তু পরে দেখা যায় কথিত নিহতরা সশরীরে হাজির হয়েছেন। এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ব্রিটেনে কেউ নিহত না হওয়া এবং লাশ খুঁজে পাওয়া না পর্যন্ত মামলা করা যাবে না বলে আইন করা হয়।

কিন্তু ১৯৫৮ সালে যখন যুক্তরাজ্যের আইন ব্যবস্থা উন্নত হয়েছে এবং ফরেনসিক বিজ্ঞানেরও যথেষ্ট অগ্রগতি হয়েছে তখন স্রেফ অনুমানের ওপর নির্ভর করে দায়েরকৃত এক হত্যা মামলা দেশজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। সে সময় ইংল্যান্ডে বসবাসকারী মিখাইল অনিউফ্রেজচিক নামক ৫৮ বছরের এক পোলিশ নাগরিকের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করে পুলিশ। তার বন্ধু ও ব্যবসার অংশীদারকে হত্যার অভিযোগ এনে তার বিরুদ্ধে এ মামলা দায়ের করা হয়। কিন্তু অভিযুক্ত বারবার বলছিলেন, তার বন্ধু তার কাছে তার শেয়ার বিক্রি করে দিয়ে পোল্যান্ড ফিরে গেছেন। কিন্তু কে শোনে কার কথা! অবস্থাগত প্রমাণের ভিত্তিতে ওই কৃষকের বিরুদ্ধে করা মামলার বিচার চলতে থাকে। প্রমাণ হিসেবে আদালতে তার রান্নাঘর থেকে পাওয়া কিছু হাড়গোড় আর রক্ত হাজির করে পুলিশ। বিচারে তার মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করেন আদালত। রায়ের বিরুদ্ধে ১৯৫৫ সালের ২৪ জানুয়ারি আপিল করেন অনিউফ্রেজচিক। তখন তার সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন দেয়া হয়। দীর্ঘ এক বছর সাজা কাটার পর নির্দোষ প্রমাণিত হন অনিউফ্রেজচিক। ১৯৫৬ সালে তিনি বেকসুর খালাস পান।

Facebook
Twitter
WhatsApp