ডেস্ক: বিজ্ঞানের কল্যাণে কত অদ্ভূত কাণ্ডই না ঘটছে পৃথিবীতে! বিজ্ঞানের সহায়তা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে এবার নাতনিকে জন্ম দিতে চলেছেন এক নানি। টেস্ট টিউব প্রযুক্তির সহায়তায় নিজের মেয়ের ডিম্বাণু গর্ভে ধারণ করেছিলেন ৫৮ বছরের ওই নারী। এবার প্রসবের পালা। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী মাসে তার মেয়ের সন্তান প্রসব করার কথা।
যুক্তরাষ্ট্রের ইউটাহ অঙ্গরাজ্যের বাসিন্দা জুলিয়া নাভারোর মেয়ে লরেনা ম্যাককিনন (৩২) মা হতে পারছিলেন না। চেষ্টা করেছিলেন বেশ কয়েকবারই। কিন্তু প্রতিবারই তাঁর গর্ভপাত ঘটে। এরপর মেয়ের সাহায্যে এগিয়ে আসেন মা নাভারো। তিনি ম্যাককিননের নিষিক্ত ডিম্ব নিজের গর্ভে প্রতিস্থাপনে সম্মত হন। ফেব্রুয়ারি মাসের গোড়ার দিকে মেয়ের সন্তান জন্ম দিতে যাচ্ছেন মা নাভারো। এ সম্পর্কে ইউটাহর দ্য সল্ট লেক ট্রিবিউন পত্রিকাকে তিনি বলেন, ‘পরিবারের সদস্য হিসেবে আমাদের একে অন্যকে সাহায্য করা উচিত।’
নাভারোর জন্য বিষয়টি ছিলো সত্যিই দূরূহ। কেননা তার তার ঋতুস্রাব বন্ধ হয়েছিলো ১২ বছর আগে। তাই শারীরিক সক্ষমতা যাচাইয়ে নানা পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হয়। পরীক্ষা শেষে চিকিৎসকেরা জানান, তাঁর দেহে নিষিক্ত ডিম্ব প্রতিস্থাপনে সাফল্যের সম্ভাবনা ৪৫ শতাংশ। এরপর শুরু হয় শরীরে হরমোন ঢুকানোর কাজ। তিন মাস ধরে প্রতিদিনই তার শরীরে হরমোন পুশ করা হতো। এভাবেই ডিম্বাণু প্রতিস্থাপনে প্রস্তুত হয় নাভারোর শরীর।
এরপর চলে আইনী প্রস্তুতি। আরো তিন মাস ধরে মা ও মেয়ের মধ্যে সলা পরামর্শ শেষে দুজন এক চুক্তি পত্রে স্বাক্ষর করেন। ম্যাককিনন বলেন, ‘নিজের মায়ের সঙ্গে এ ধরনের চুক্তি করার বিষয়টি সত্যিই অদ্ভুত একটা ব্যাপার।’
চিকিৎসকরা বলেছিলেন, নাভারোনের গর্ভধারণের সম্ভাবনা মাত্র ৪৫ ভাগ। কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে প্রথম বারের প্রচেষ্টাতেই গর্ভবতী হন তিনি। এরপর সবকিছু স্বাভাবিক গতিতেই চলতে থাকে। কোনোরকম অসুস্থতা বা অস্বস্তিকর কিছুই অনুভব করছিলেন না নাভানোন। তখন পোয়াতি মায়ের দেখভাল করতেন মেয়ে ম্যাককিনন। সারক্ষণই মাকে উপদেশ। ‘মা বেশি পানি খাও, আর বাদাম খেয়ো না। তোমার পায়ে পানি এসে যাবে।’ মেয়ের পাকামোতে মাঝে মধ্যে বিরক্ত হয়ে যেতেন নাভারোন। তখন মেয়েকে বলতেন,‘ ভুলে যেয়ো না বাপু, তোমাদের দু বোনকে কিন্তু আমিই জন্ম দিয়েছি। কাজেই কি করা উচিত তা আমি ভালোই বুঝি।’
এদিকে শ্বাশুড়ির গর্ভে নিজ সন্তানের বেড়ে ওঠা নিয়ে দারুন উত্তেজিত ম্যাকের স্বামী মিকাহ ম্যককিনন। তিনি বলেন,‘ আমার কল্পনার চেয়েও ভালোভাবে সবকিছু এগুচ্ছে। আমি এখন দারুন সুখী।’ তবে মাত্র একটি কন্যা সন্তানের বাবা মা হয়েই থেমে থাকতে চান না ম্যাককিনন দম্পতি। আরো অনেক ছেলে মেয়ে চাই তাদের। এতে তাদের তেমন একটা সমস্যা হওয়ার কথা নয়। কারণ লরেনা ম্যাককিননের ভাষায় ‘পরীক্ষাগারের কাচের বাক্সে এখনো আমাদের পাঁচটি ভ্রণ রয়েছে।’
