যুক্তরাজ্যের বার্কশায়ারের বাসিন্দা হারমান এমনিতেই পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম নামে এক জটিল রোগে ভুগছেন। এর কারণে তার সারা শরীরে এমনিতেই অতিরিক্ত লোম গজিয়েছে। যা তার সমবয়সী তরুণীদের থেকে আলাদা করে দিয়েছিল হরমনকে। সারা মুখে পুরুষদের মত গোঁফ, দাড়ি থাকার দরুণ এক সময় হরমনকে প্রতিনিয়ত হাসি ঠাট্টার পাত্রী হতে হতো সবার কাছে।
কিন্তু হরমন আর এই সব কথায় পাত্তা দেবেন না ঠিক করেছেন। তিনি ঠিক করেছেন লোকে কী বলবে সেই কথায় পাত্তা না দিয়ে আর নিজের দাড়ি, গোঁফ, কাটবেন না তিনি। বর্তমানে শিখ ধর্মে দীক্ষিত হয়েছেন তিনি। এই ধর্মে শরীরের লোম কাটা অপরাধ।
জানা যায়, ১১ বছর বয়সে হারমান যখন নিতান্তই কিশোরী তখন তার মুখে প্রথম দাড়ি, গোঁফের চিহ্ন দেখা যায়। এই লোম দ্রুত তার হাত ও বুকেও ছড়িয়ে পড়ে। সেই সময় প্রতিনিয়ত স্কুলে সহপাঠীদের ঠাট্টা শিকার হতে হতো তাকে। রাস্তা, ঘাটেও তাকে দেখে নানা আপত্তি জনক মন্তব্য করতো লোকজন। এমনকী ইন্টারনেটে তার ছবি দেখে অচেনা কিছু ব্যক্তি মৃত্যুর হুমকি দেয় হারমানকে।
শুধুমাত্র শারীরীক একটা বৈশিষ্ট্যর জন্য স্কুলে তাঁকে `sheman` বলা শুরু করেছিল বন্ধুরা। একসময় সপ্তাহে অন্তত দুবার করে দাড়ি, গোঁফের সঙ্গে সারা শরীরের লোম কাটতে হতো হরমনকে। করতে হতো ওয়াক্সিং। শুধুমাত্র পরিহাসের পাত্রী হওয়ার ভয়ে একসময় নিজেকে তার ছোট্ট ঘরের মধ্যেই আঁটকে রাখতেন তিনি। যেতেন না কোনও পারিবারিক অনুষ্ঠানেও।
পরিস্থিতি এতটাই খারাপ হয়ে যায় যে হরমন নিজের উপর অত্যাচার করা শুরু করেন। আত্মহত্যার চেষ্টাও করেন বেশ কয়েকবার।
কিন্তু এখন হারমান ঠিক করেছেন আর নিজেকে কষ্ট দেবেন না। পাত্তা দেবেন না অন্য কারোর অকারণ পরিহাসের অন্যায় চেষ্টাকে। আর কাটবেনও না তার দাড়ি, গোঁফ। হরমনের বলেন, ‘ঈশ্বর আমাকে এই ভাবেই সৃষ্টি করেছেন। আমি যে রকম তা নিয়েই আমি খুব খুশি।’
পেশায় মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষিকা হারমান আরো বলেন, ‘আমার নিজেকে অনেক বেশি নারী মনে হয় এখন। দাড়ি, গোঁফের সঙ্গেই নিজেকে সেক্সি আর সুন্দরী মনে হয় আমার। আমি নিজেকে ভালবাসতে শিখেছি। যারা আমার কাছে কেউই নয় তাদের কথায়, ঠাট্টায় আমার আর কিছুই এসে যায় না।’
যদিও এখনো রাস্তায় বের হলে হারমানের দিকে অবাক চোখে তাকায় লোকে। তার দাড়ি, গোঁফ দেখে অনেকেই `স্যার` বলে সম্বোধন করে ফেলে। কিন্তু তার পরেই হরমোনের পোষাক আর শরীরে পূর্ণাঙ্গ স্তনের উপস্থিতি দেখে চমকে যায়। এমনকী যে স্কুলে তিনি পড়ান সেই স্কুলের ছোট বাচ্চাদের তাকে নিয়ে বিবিধ প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়।
কিন্তু এখন আর এই সব কিছু ছুঁয়ে যায় না হারমানকে। রাস্তার লোক, দূর সম্পর্কের আত্মীয়দের কটূক্তির পরোয়া করেন না তিনি। চেষ্টা করেন স্কুলের বাচ্চাদের তাকে নিয়ে করা সমস্ত প্রশ্নের যথাযথ উত্তর দিতে।
বাড়িতে হারমানের ভাই তার এই সিদ্ধান্তের সব থেকে বড় সমর্থক। হারমান চান অন্য মেয়েরাও তার জীবন থেকে অনুপ্রেরণা পাক। নিজেরা যেরকম সেই ভাবেই নিজেদেরকে স্বীকার করতে শিখুক তারা।