চিত্র বিচিত্র ডেস্ক: আমরা কি হিসাব করে বলতে পারি সারাবিশ্বে প্রতিদিন কত জীবজন্তুর জন্ম হয়?বিবিসির মোর অর লেস` নামের একটি অনুষ্ঠানে এই প্রশ্নটি করেছিলেন একজন শ্রোতা। ঐ অনুষ্ঠানের লিজি ম্যাকনিল তার একটা জবাব খোঁজার চেষ্টা করেছেন।
প্রথম কথা, ইংরেজিতে অ্যানিম্যাল বা জীবজন্তু বলতে কী বোঝায়? অক্সফোর্ড অভিধানের দেওয়া সংজ্ঞায় – যারা ডিমে তা দিয়ে বা যারা প্রসবের মাধ্যমে বাচ্চা জন্ম দেয়। এরা স্তন্যপায়ী হতে পারে, নাও হতে পারে। মেরুদণ্ডী হতে পারে, নাও হতে পারে। কী মাত্রায় এই বংশবৃদ্ধি হয়, তার ধারণা দিতে গেলে প্রথমেই বলতে হয় খরগোশের কথা।
ব্রিটেনে এক হিসাবে বলা হয়, এদেশের বনজঙ্গলে বাচ্চা জন্ম দেওয়ার উপযুক্ত চার কোটি খরগোশ রয়েছে। একটি মাদি খরগোশ তার জীবদ্দশায় এমনকি সাতবার বাচ্চা জন্ম দিতে পারে। প্রতিবার বাচ্চা হয় তিন থেকে সাতটি। সেই হিসাবে ব্রিটেনেই প্রতিদিন গড়ে ১৯ লাখেরও বেশি খরগোশের বাচ্চা জন্ম হচ্ছে।
তবে ভাগ্য বা দুর্ভাগ্য যেভাবেই বর্ণনা করেন, খরগোশের বাচ্চার মৃত্যুহার খুব বেশি। বয়:প্রাপ্ত হওয়ার আগেই সিংহভাগের মৃত্যু হয়। নাহলে ব্রিটেনের বনজঙ্গলে রাজত্ব করতো খরগোশ। কিন্তু বংশবৃদ্ধিতে পিছিয়ে থাকা হামবোল্ট প্রজাতির পেঙ্গুইন নিয়ে কী জানা যায়?
চিলি এই পেরুর এই পেঙ্গুইন প্রজাতি প্রতিবার গড়ে দুটি করে ডিম পাড়ে। এক বছরে বড়জোর দুবার ডিম দিতে পারে। তাও আবার সবগুলো ডিম রক্ষা করা সম্ভব হয়না।
হিসাব করে দেখা, বিশ্বের এই প্রজাতির পেঙ্গুইনের জন্ম হয় প্রতিদিন গড়ে মাত্র ৪০টি। ফলে এই প্রজাতির পেঙ্গুইন হুমকির মুখে পড়েছে। মুরগীর ক্ষেত্রে এই চিত্র পুরোপুরি ভিন্ন। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার দেওয়া হিসাবে বিশ্বে প্রতিদিন ছয় কোটি ২০ লাখ মুরগির জন্ম হয়।
মৌমাছি তেমন আরেকটি প্রাণী। গরমের মাসগুলোতে একটি রানী মৌমাছি গড়ে প্রতিদিন ১৫০০ ডিম পাড়ে।
এ বছরে জানুয়ারির এক হিসাবে ব্রিটেনে মৌচাকের সংখ্যা ২৪৭,০০০টি । সুতরাং ভাগ্য অনুকূলে থাকলে কাগজে কলমে ব্রিটেনে এ বছরের গ্রীষ্মে ৩৭ কোটি ১২ লাখ মৌমাছির জন্ম হবে। এসব সংখ্যা কতটা গ্রহণযোগ্য?
লন্ডনের জীববিজ্ঞান ইনিস্টিউটের মনিকা বম বিশ্বাস করেন সারা বিশ্বের কত জীব-জন্তু, কীট পতঙ্গ জন্ম হচ্ছে তা বলা প্রায় অসম্ভব। “আমরা এখনও প্রতিটি প্রাণীর বংশ বিস্তারের আচরণ জানিনা।”
তবে লন্ডনের কুইন মেরিস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অ্যাক্সেল রসবার্গের কাছে একটি উত্তর রয়েছে। তিনি বলছেন যে প্রাণীর ওজন যত কম, তাদের প্রজনন ক্ষমতা তত বেশি।
সুতরাং হাতির চেয়ে মৌমাছির বংশ বিস্তার হয় অনেক বেশি। সজারুর চেয়ে উইপোকার সংখ্যা অনেক বেশী।
পেঙ্গুইন, মৌমাছি, মুরগী বা খরগোশের বংশবৃদ্ধির একটা ধারণা পাওয়া গেলেও বিজ্ঞানীরা অকপটে স্বীকার করেন, বিশ্বে মোট কত প্রাণীর জন্ম হচ্ছে, তার ধারণা পাওয়া এখনও অসম্ভব।
ধারণা করা হয় বিশ্বে ৭৭ লাখ প্রজাতির প্রাণী রয়েছে। কিন্তু সাগরের পানিতে এবং সাগরের তলায় অন্তত ৯৫ শতাংশ স্থানে প্রাণীকুলের মধ্যে কী ঘটছে – তা এখনও অজানা। বিবিসি