রাফিদুল হাসান, লাইফস্টাইল কন্ট্রিবিউটার, অনলাইন আপডেট। “একদা ছিলো এক রাজা। আর ছিলো রাণী। তাদের ফুটফুটে এক কন্যা সন্তান ছিলো। তারা সকলে সুখে শান্তিতে বসবাস করছিলো। একদিন এক ডাইনী সেই শিশুটিকে জাদু করে ইঁদুর বানিয়ে দিলো।” এগুলো হলো বহুকাল ধরে চলে আসা রূপকথার গল্প। এইসকল গল্পের দিন ফুরালো বলে। অদুর ভবিষ্যতে এসবের স্থান দখল করে নিতে পারে বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল এর মত বিষয়গুলো। আমার কথা শুনে হয়তো মনে হতে পারে ‘কিসের মধ্যে কি, পান্তা ভাতে ঘী’ প্রবাদের কথা। তাহলে চলুন কিছু বিষয় জেনে নেয়া যাক।
সাধারণ মানুষের মতে পৃথিবীর সবচেয়ে অভিশপ্ত যায়গা গুলোর মধ্যে অন্যতম এই বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল। এর অবস্থান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা, পোর্টে রিকা ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বারমুডা দ্বীপ নিয়ে। তিন কোনা বিশিষ্ট এই স্থানটির আকৃতি আপাত দৃষ্টিতে দেখতে অনেকটা সমবাহু ত্রিভুজের মত বলেই এর নামকরণ বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল হয়েছে। কেউ কেউ একে শয়তানের ত্রিভুজও বলে থাকেন। এটি ২৫-৪০ ডিগ্রী উত্তর অক্ষাংশ এবং ৫৫-৫৮ ডিগ্রী পশ্চিম দ্রাঘিমাংশের মধ্যে অবস্থিত।
সাধারণত রহস্যময় যায়গাগুলো নিয়েই সবচেয়ে বেশি মিথ প্রচলিত থাকে। বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল তথা শয়তানের ত্রিভুজও এর ব্যাতিক্রম নয়। এর সম্পর্কের প্রাচীন বহু মিথ প্রচলিত আছে। অনেকেই বলে থাকেন ভিনগ্রহের প্রাণীরা যখন পৃথিবীতে আসেন তখন এটাকে তারা ঘাটি বানিয়ে নেন। সেই সময় এখানে প্রবেশ করা সবকিছু কে তারা অদৃশ্য করেন দেন। আবার কেউ কেউ বলেন এখানে প্যারারাল ইউনিভার্স এর প্রবেশ পথ রয়েছে। তবে ধীরে ধীরে বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ এর মাধ্যমে এগুলোর বাস্তবতা বেড়িয়ে আসছে।
১৯৪৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের কিছু যুদ্ধ বিমান প্রশিক্ষণের জন্য আকাশে উড্ডয়ন করে কিন্তু কিছুক্ষণের মাঝেই তাদের সাথে সমস্ত যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায় এবং তারা নিখোঁজ হয়ে যায়। তাদের প্রেরিত সর্বশেষ বার্তা টি ছিলো “সামনে প্রচন্ড কুয়াশা। আমারা কিছুই দেখতে পাচ্ছি না। কোথায় যাচ্ছি তাও বুঝতে পারছি না। আমাদের উদ্ধার করো।”
এ অঞ্চলের রহস্যময়তার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক হচ্ছে কোনো জাহাজ কিংবা বিমান এ ত্রিভুজ এলাকায় প্রবেশের সাথে সাথে ঘন কুয়াশার মধ্যে পরে যায় এবং কোনো প্রকার বেতার তরঙ্গ প্রেরণ করতে পারে না। একসময় তা হারিয়ে যায়। রহস্যের আরও একটি দিক হলো এখানে হারিয়ে যাওয়া কোনো কিছুরই ধংসাবশেষ পরবর্তীকালে অনেক খুঁজেও পাওয়া যায় নি। ইউএস নেভির সূত্র মতে বিগত ২০০ বছরে এই এলাকায় কমপক্ষে ৫০ টি জাহাজ এবং ২০ টি বিমান অদৃশ্য হয়েছে। নিখোঁজ হয়েছে প্রায় ১৫০০ এর মত লোক।
তবে বিজ্ঞানীরা এর ব্যাখ্যা ঠিকই দিয়েছেন। আধুনিক জিএসএম প্রযুক্তি সম্পন্ন জাহাজ এই ত্রিভুজ অঞ্চলের মাঝ দিয়ে অক্ষত অবস্থায় বের হয়ে আসতে পেরেছে। এছাড়াও ত্রিভুজ সীমানার মাঝে বেশ কিছু অংশ স্থলভূমিও আছে। সেখান থেকে আজ পর্যন্ত কোনো কিছু গায়েব হয়ে যায় নি। তবে হ্যা, ত্রিভুজের অভ্যন্তরের অঞ্চল প্রায় সবসময়ই ঘন কুয়াশায় ঢাকা থাকে। এবং সেখানকার সমুদ্রের গভীরতাও অনেক বেশি। জাহাজগুলো অদৃশ্য হয়া যাওয়ার এটাই প্রধান কারন হিসেবে মনে করা হয়।
রহস্যের জট যেহেতু খুলছে একটা সময় অবশ্যই বাকি থাকা রহস্যগুলোও উন্মোচিত হয়ে যাবে। মিথ গুলো থাকবে মিথ এর যায়গায় আর বাস্তবতাগুলো এগিয়ে চলবে আপন গতিপথে।