ইসতিয়াক আহমেদ, লাইফস্টাইল কন্ট্রিবিউটার, অনলাইন আপডেট। অক্টোবর ২৮, সাল ১৯৪৩। সময়টা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের। যুদ্ধক্ষেত্রে শত্রুপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য প্রতিটি দেশই তাদের যুদ্ধপ্রযুক্তি উন্নত করার জন্য ব্যাপক চেষ্টা চালাচ্ছিল। ইউএস বা মার্কিন সেনাবাহিনীর এরকমই একটি গবেষণা প্রোজেক্ট ছিল “প্রোজেক্ট রেইনবো” যা পরবর্তীতে “ফিলাডেলফিয়া এক্সপেরিমেন্ট” নামে পরিচিতি পায়।
১৯৪৩ সালের, ২৮ অক্টোবর এই দিনে ইউএস নেভির একটি জাহাজ “ইউএসএস এল্ড্রিজ” এর উপ্র এই পরীক্ষাটি চালানো হয়। পরীক্ষাটি করা হয় যুক্তরাষ্ট্রের পেন্সিলভানিয়ার ফিলাডেলফিয়া নেভাল শিপইয়ার্ডে। এই পরীক্ষার মূল উদ্দেশ্য ছিল একটি যুদ্ধজাহাজকে শত্রুপক্ষের রাডার ফাকি দেয়ার প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা। পরীক্ষাটি চালানো হয় একজন বিখ্যাত বিজ্ঞানীর তত্বের উপর ভিত্তি করে।
সেই তত্ত্বটি হল, আইনস্টাইনের “ইউনিফাইড ফিল্ড থিওরি” । এই থিওরি অনুযায়ী, যদি এমন একটি ক্ষেত্র তৈরী করা যায় যেখানে আলো প্রবেশ করবে না বা যেখান থেকে আলো বেরও হবে না, সেখানে সময়কে স্থির করে ফেলা যাবে। আইনস্টাইনের এই তত্ব সত্যি হলেও, কেউ এখনো পর্যন্ত এর ব্যাবহারিক প্রমাণ আবিষ্কার করতে পারেননি।
ইউএস সেনাবাহিনী এই তত্ত্বের কিছু অনুসিদ্ধান্তের উপর ভিত্তি করে পরীক্ষাটি চালায়। পরীক্ষাটি বাস্তবে রূপ দিতে তারা আরেকজন বিখ্যাত বিজ্ঞানীর আবিষ্কার ব্যবহার করেছিল বলে ধারণা করা হয়। সেটি হল বিজ্ঞানী টেসলার আবিষ্কৃত “টেসলা কয়েল”। ধারণা করা হয়, “ইউএসএস এল্ড্রিজ” জাহাজটিকে পুরোপুরি টেসলা কয়েল দিয়ে জড়িয়ে দেয়া হয়। এরপর বাইরে থেকে প্রচন্ড শক্তি প্রবাহিত করা হয় যাতে আশেপাশে একটি বিশাল তড়িত চুম্বকীয় ক্ষেত্র তৈরী হয়।
কিন্ত প্রজেক্টের ফলাফল হিসেবে যা দেখা যায় তা কল্পবিজ্ঞানের কাহিনী বলে মনে হয়। বলা হয়, শক্তি প্রবাহ দেয়ার সাথে সাথে জাহাজটি বন্দর থেকে অদৃশ্য হয়ে যায়। এমনকি, কিছু প্রত্যক্ষদর্শীর ভাষ্যমতে ঐ সময়টিতে জাহাজটিকে নরফোক, ভার্জিনিয়াতেও দেখা যায়। দেখা যাওয়ার সময়ের পরিমাণ ছিল দশ সেকেন্ডের মত।
এদিকে ফিলাডেলফিস পোর্টেও জাহাজটি অদৃশ্য থাকার সময়ও দশ সেকেন্ডের মতই ছিল।পরীক্ষার সময় জাহাজে কিছু ক্রু ছিলেন। অদৃশ্য হওয়ার পর জাহাজটি যখন আবার দৃশ্যমান হয় তখন দেখা যায় অনেক ক্রুই নিখোজ। যারা বেচে ছিলেন তাদের অনেককেই মানসিক এবং শারিরীকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন।
পরীক্ষা সম্পর্কে সবচেয়ে বড় গুজবটি হল, যারা পরীক্ষায় বেচে ফিরেছিলেন তারা নাকি অদৃশ্য হয়ে যাওয়ার ক্ষমতা অর্জন করেন। এই ঘটনার পর প্রোজেক্টটি মার্কিন সরকার বন্ধ করে দেয়। রহস্যময়ভাবে এই পরীক্ষা সংক্রান্ত যাবতীয় ডাটা এবং প্রমাণাদি নষ্ট করে ফেলা হয়। সরকার পরীক্ষার ব্যাপারে চরম গোপনীয়তা রক্ষা করা সত্ত্বেও কিভাবে যেন পরীক্ষার কথা ফাস হয়ে যায়। পরবর্তীতে এই ঘটনার ব্যাখ্যা নিয়ে অনেক লেখালেখি তর্কবিতর্কও রয়েছে।
বিখ্যাত গণিতবিদ এবং পদার্থবিজ্ঞানী মরিস জেসাপ আইনস্টাইনের ইউনিফাইড ফিল্ড থিওরি নিয়ে গবেষণা করছিলেন। এরপর তিনি “দ্য কেস ফর দ্য ইউএফও” নামে একটি বইও লেখেন। এই বিষয়ে তিনি আরও ব্যাপক গবেষণার দরকার আছে বলে মনে রাখতেন। ১৯৫৬ এর ১৩ জানুয়ারি তিনি একটি অদ্ভুত চিঠি পান যাতে লেখা ছিল, “১৩ বছর আগে মহাকর্ষ আর ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিজম নিয়ে ইউএস সরকারের গবেষণার ফলাফল ছিল ভয়াবহ। কাজেই আপনি এ নিয়ে আর বাড়াবাড়ি করবেন না।“
ফিলাডেলফিয়া এক্সপিরেমেন্টে আসলে কি ঘটেছিল? অনেকেই ঘটনাটিকে গুজব বা বানানো গল্প বলে উড়িয়ে দিলেও আসলেই ফিলাডেলফিয়া এক্সপেরিমেন্টে অদ্ভুতুড়ে কিছু একটা ঘটেছিল এ ব্যাপারে নিশ্চিত। সত্যিই কি জাহাজটি অদৃশ্য হয়েছিল? কেনইবা সরকার ২৮ অক্টোবর ১৯৪৩ এর পর পরীক্ষাটি বন্ধ করে দেয়? কেনইবা পরীক্ষা সংক্রান্ত সমস্ত তথ্য সরিয়ে ফেলা হয়? উউতর হয়তোবা কোনদিনই জানা যাবে না। কিংবা ভবিষ্যতে হয়তো আইনস্টাইনের মত কোন এক সুপার জিনিয়াস এই রহস্য উন্মোচন করবেন। উত্তরটা ভবিষ্যতের হাতেই তোলা থাক।