রাফিদুল হাসান,বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ফিচার, অনলাইন আপডেট
নিত্য নতুন প্রযুক্তির সাথে তাল মিলিয়ে চলছে বর্তমান বিশ্ব। তবে সকল প্রযুক্তির হাজারো উপকারী দিক থাকলেও প্রত্যেকটিরই কোনো না কোনো অপকারী দিক রয়েছে। কিন্তু কোনো একটি প্রযুক্তির উপকারী দিকের পরিবর্তে অপকারী দিকটিই যদি মুখ্য হয়ে উঠে তখন তা বিপর্যয়ের কারণ হয়ে উঠে। আর ব্যাপারটি যদি হয় দানবের মত তবে বিপর্যয়ের পরিমাণ হবে ভয়াবহ। যা মানুষের চিন্তাভাবনাকেও কাঁপিয়ে দিতে পারে। এরকমই একটি বিষয় হলো হার্প।
এখন প্রশ্ন উথতেই পারে যে, ‘হার্প কি?’ HAARP মানে হলো High Frequency Active Auroral Research Project/Program. এটি আমেরিকার সামরিক বাহিনী পরিচালিত প্রতিরক্ষা মন্ত্রনালয়ের একটি গোপন পরীক্ষা। তবে আমেরিকার পাশাপাশি রাশিয়াও এই প্রযুক্তি ব্যাবহার করছে। এ প্রযুক্তি ব্যাবহারের মাধ্যমে কৃত্রিম ভাবে ভুমিকম্প, সুনামী ঘটানো সম্ভব।
হার্প এর কথা তুলতে গেলে যে বিজ্ঞানীর নাম সামনে আসে তিনি হলেন আধুনিক বিজ্ঞান জগতের ‘দা ডার্ক নাইট’ খ্যাত বিজ্ঞানী নিকোলা টেসলা। টেসলার বিখ্যাত ‘ফ্রী এনার্জি’ থিওরি থেকেই মূলত এই হার্প টেকনোলোজি এসেছে। নিকোলা টেসলা কে আমরা টেসলা কয়েলের জন্যই বেশি জানি। এখন পর্যন্ত বিশ্ব রেকর্ড হয়ে থাকা ১৩০ ফুট দৈর্ঘ্যের বৈদ্যুতিক রশ্নি টেসলা তৈরি করেছিলেন বিশাল সাইজের এক টেসলা কয়েলের মাধ্যমে। লোকেমুখে প্রচলিত আছে যে টেসলার একটি ভূমিকম্প মেশিন ছিলো। নিউইয়র্কে সংঘঠিত রিখটার স্কেলের ৭ মাত্রার একটি ভূমিকম্পের জন্য দায়ী ছিলেন নিকোলা টেসলা। সেই ভূমিকম্পে নিউ ইয়র্কের ফিফথ এভিনিউ পুরোপুরি ধ্বসে গিয়েছিলো।
টেকটনিক প্লেটের সংঘর্ষের ফলে কিংবা আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাত এর ফলে মূলত ভুমিকম্প ঘটে থাকে। হার্প প্রযুক্তি ব্যাবহারের মাধ্যমে একটি মারাত্নক মারনাস্ত্র প্রস্তুত করা হয়। যার নাম হলো টেকটনিক ওয়েপন। এর দ্বারাই কোনো স্থানে কৃত্রিম ভুমিকম্প, সুনামি কিংবা কোনো অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যাবস্থায় বাধা সৃষ্টি করা হয়।
টেরেস্টেরিয়াল স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ভুমি থেকে আয়োনস্ফিয়ায়ের ১০০-৩৫০ কিমি এর মধ্যে তরঙ্গ পাঠানো হয়। সেই তরঙ্গ উতপ্ত হয়ে আয়োনোস্ফিয়ারের ইলেক্ট্রন এর মধ্যে পরিবর্তন সৃষ্টি করে ম্যাগনেটিক ফিল্ড তৈরি করে। অয়োনস্তরের এফ ওয়ান লেয়ার সেই তরঙ্গ কে ভূমিতে প্রেরন করে। ভূমিতে স্থাপিত হার্প এন্টেনা সেই তরঙ্গ গ্রহন করে অন্য একটি স্যাটেলাইট এ পাঠায়। প্রয়জনের সময় সেই স্যাটেলাইটটি মারনাস্ত্রের কাজ করে।
কিছু গবেষকের মতে ১৯৯৮ সালে আফগানিস্তানে সংঘঠিত ভুমিকম্প এবং ২০০৫ সালে পাকিস্তানের কাশ্মিরে সংঘঠিত ভূমিকম্প কৃত্রিম ভাবে হয়েছিলো। এর জন্য দায়ী করা হয় রাশিয়া কে। ২০০৮ সালে পশ্চিম চীনের জেনজু শহরে এ ২০১০ সালে হাইতিতে ঘটে যাওয়া ভুমিকম্প নিয়ে বলা হয় সেসব অঞ্চলে হার্প টেকনোলজির পরিক্ষা চালিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ২০১৫ সালে নেপালে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ ভুমিকম্পকেও কৃত্রিম বলে ঘোষনা দেন গবেষকেরা। তাদের মতে ভারত ও চীনকে সতর্ক করে দেবার জন্যই বলির পাঠা হিসেবে নেপালে এ ভুমিকম্প ঘটানো হয়। তবে কিছু কিছু বিজ্ঞানীদের মতে কৃত্রিম ভুমিকম্প শুধুই গুজব। এর কোনো বাস্তবতা নেই বলে তারা ধারণা করেন।
১৯৯৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়া হার্প এর মূল গবেষণা ক্ষেত্র হলো আয়োনোস্ফিয়ার। মার্কিন নৌ ও বিমান বাহিনী পরিচালিত এই গবেষনার স্থান হলো গ্যাকোনা, আলাস্কা। মার্কিন বাহিনীর ভাষ্যমতে ২০১৪ সালে এই প্রজেক্ট বন্ধ করে দেয়া হয়। তবে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন মনে করেন আমেরিকা এখনো এই প্রজেক্ট সচল রেখেছে অতি সংগোপনে।
তথ্যসূত্রঃ উইকিপিডিয়া ও ক্রেজি সায়েন্স।
ছবিসুত্রঃ ক্রেজি সায়েন্স