রাফিদুল হাসান, লাইফস্টাইল কন্ট্রিবিউটার, অনলাইন আপডেট। বিভিন্ন কবি সাহিত্যিকেরা অধিকাংশ সময়েই নারীকে রহস্যময়ী বা ছলনাময়ী হিসেবে অভিহিত করে থাকেন। কথায় আছে, “যা রটে, কিছু না কিছু ঘটে”। তেমনি কিছু কিছু নারীর বিভিন্ন কর্মকান্ড, জীবনযাপন যেনো তাদেরকে আরো বেশি রহস্যময় করে তোলে। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ক্ষেত্রে এমন অনেক রহস্যময়ীর খোজ পাওয়া গেছে। তাদের নাড়ি-নক্ষত্রও উদ্ধার হয়েছে। পৃথিবীর বাঘা বাঘা সব ঈজিপ্টোলজিস্টদের ঘুম হারাম করা এমনি এক রহস্যময়ী রমণী হলেন নেফারতিতি।
তার পুরো নাম নেফারনেফারুআতেন নেফারতিতি। নেফারতিতি এমন এক রমণী ইতিহাসের ভাষ্যমতে ধারণা করা হয় এর আগে তার মত সুন্দরীর আগমন মিশরে ঘটেনি। নেফারতিতি শব্দের অর্থ হলো “সবচেয়ে সুন্দর ব্যাক্তির আগমন” বা ইংরেজিতে “The beautiful one has come” আর আগমন থেকে শুরু করে প্রস্থান পর্যন্ত সম্পুর্ণ জীবনটাই রহস্যময়তার আচ্ছাদনে ঢাকা। মিশরীয় ইতিহাসে তাকে বলা হয় “Most important queen in the History of Egypt.”
ফারাওদের মত পুরো মিশর নিয়ন্ত্রন করার ক্ষমতা ছিলো রাণী নেফাররতিতির। মিশরের সমৃদ্ধ সময়কার গুরুত্বপুর্ণ ফারাওদের মাঝে একজনের রাণী ছিলেন এই নেফারতিতি। আমেনহোটেপ এর ছেলে ফারাও “আখেনআতেন” ছিলেন নেফারতিতির স্বামী। উনার মত ক্ষমতাধারী রমণী মিশরে দ্বিতীয় কেউ ছিলেন না। ধারণা করা হয়ে থাকে মিশরীয় ইতিহাসের দ্বিতীয় নারী ফারাও ছিলেন তিনি।
গুরুত্বপুর্ণ এই মানুষটিকেই হয়তো ভুলে যেতে চেয়েছিলো মিশর। ১৯১২ সালের আগে উনার সম্পর্কে কেউই তেমন কিছু জানতো না। একদল জার্মান ক্ষননকারীর মাধ্যমে উনার পরিচয় আবার জনসম্মুখে আসে। তারা ১৯১২ সালে খননকাজ চালাতে গিয়ে অপুর্ব সুন্দর একটি কাদামাটির রেলিক খুঁজে পান। পরবর্তীতে গবেষণার মাধ্যমে জানা যায় রেলিকটি রানী নেফারতিতির ছিলো। বর্তমানে এই রেলিকটি জার্মানীর বার্লিন মিউজিয়ামের প্রধাণ আকর্ষণ।
ফারাও আখেনআতেন ও রাণী নেফারতিতি মিশরীয় ইতিহাসের আলোচিত রাজারাণী ছিলেন। নেফারতিতি ফারাও আখেনআতেন এর গ্রেট রয়েল ওয়াইফ ছিলেন। নিজেদের পুরোনো ধর্ম ত্যাগ করে নতুন ধর্মের প্রবর্তন করেন এই রাজারাণী দম্পতি। তাই অনেকে তাদের ধর্মত্যাগী উপাধিও দিয়ে থাকেন।
মিশরের প্রথম নারী ফারাও ছিলেন “হাটসেপসুত”। ইতিহাস পর্যালোচনা করে ধারণা করা হয় ফারাও আখেনআতেন এর মৃত্যুর পর ফারাও তুতেনখামেন নাবালক থাকা অবস্থায় তার স্থলভিষিক্ত হয়ে মিশরের শাসন কার্য পরিচালনা করেন ফারাও নেফারনেফারুআতেন। যদিও এটি প্রমাণিত সত্যি নয় তবে বিভিন্ন যুক্তিতর্কের মাধ্যমে ধারণা করা হয় নেফারতিতিই মিশরের দ্বিতীয় নারী ফারাও যিনি প্রথম নারী ফারাও হাটসেপসুত এর প্রায় ১০০ বছর পর সিংহাসন এ আরোহন করেন।
নেফারতিতির জন্ম মৃত্যু সম্পর্কে ধারণা করা হয়ে খ্রিষ্টপুর্ব ১৩৭০ সালের দিকে জন্মগ্রহণ করেন এবং খ্রিষ্টপুর্ব ১৩৩০ সালের দিকে মৃত্যুবরণ করেন।
তথ্যসূত্রঃ মিশরের ইতিহাস, উইকিপিডিয়া ও ইন্টারনেট।