গ্রিক মিথের যত দানবরা! (দেখুন ছবি সহ)

মেহেদী হাসান গালিব, লাইফস্টাইল কন্ট্রিবিউটার, অনলাইন আপডেট। ‘মিথ’ শব্দটি এসেছে গ্রিক শব্দ ‘মাইথোস’ থেকে। ‘মাইথোস’ এর অর্থ থেকেই স্পষ্ট বোঝা যায় মিথ হল এক ধরণের লোককথা, যা সত্য ঘটনা থেকে উদ্ভূত। তবুও সন্দেহ থেকেই যায়। মিথে বর্ণিত কিছু কিছু বিষয়ের অস্তিত্ব বর্তমানে খুঁজে পাওয়া গেলেও এমন অনেক বিষয়ই আছে যা কেবল আমাদের কল্পনাতেই সম্ভব।

তবে সত্য কিংবা কল্পনা যাই হোক না কেনো, গ্রিক মিথে যেসব দানবের কথা বর্ণিত আছে, তারা আমাদের মাঝে পূর্ণ আবেদন ও ভয় সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছে। তাই তো সেসব দানবের কথা মনে পড়লেই আমাদের শরীরে কাঁটা দিয়ে ওঠে! তাদের ভয়ংকর শক্তি ও বিভৎস চেহারা আমাদের ভেতরটা শুকিয়ে দেয়! তেমনি কিছু বিখ্যাত গ্রিক মিথের দানবের বর্ণনা নিচে তুলে ধরা হল।

মিনোটর: দেবতা পোসেইডন ক্রিটের রাজা মাইনসকে একটি অসাধারণ সুন্দর ষাঁড় দেন, যেনো মাইনস পোসেইডনের উদ্দেশ্যে এটি উৎসর্গ করে। কিন্তু মাইনস তা না করে ষাঁড়টিকে নিজের কাছে রেখে দেয়। এতে ক্ষুব্ধ হোন পোসেইডন। তিনি ষাঁড়ের প্রেমে উন্মাদ করে তোলেন মাইনসের স্ত্রী পেসিফিকে। ফলে পেসিফির গর্ভে জন্ম হয় মিনোটরের।

মিনোটরের দেহের অর্ধেক অংশ ছিল মানুষের মত এবং বাকি অর্ধেক অংশ ছিল ষাঁড়ের মতো। পেসিফির মাতৃস্নেহে বড় হতে থাকে মিনোটর। কিন্তু বড় হয়ে সে অত্যন্ত হিংস্র ও বন্য হয়ে ওঠে। মাইনস মিনোটরকে হত্যা না করে লেবিরিন্থ নামক একটি গোলকধাঁধার ঠিক মধ্যিখানে আটকে রাখেন। পরবর্তীতে ঘটনাচক্রে থিসিউসের হাতে মৃত্যু ঘটে মানুষখেকো এই হিংস্র দানবের।

গর্গন: গর্গন হল গ্রিক মিথলজির সবচেয়ে ভয়ংকর দানবী। সোনার ফলকে আবৃত শরীর ও বিশাল ডানাযুক্ত এই দানবীর দিকে যে একবার তাকাতো, সে সঙ্গে সঙ্গে পাথরে পরিণত হয়ে যেতো। গর্গনদের মাথাভর্তি ছিল জীবন্ত সর্পকেশ, যেগুলো পৃথিবীর যেকোনো বিষধর সাপের চেয়েও বেশি ভয়ংকর।

গর্গনরা ছিল তিন বোন। তাদের মধ্যে দুইজন স্থেনো ও ইউরায়েলি ছিল অমর। আর তৃতীয় বোন মেডুসা ছিল মরণশীল। মেডুসার মৃত্যু ঘটে জিউসপুত্র পার্সিউসের হাতে। মেডুসাকে হত্যা করার সময় পাথরে পরিণত হওয়া থেকে রক্ষা পেতে পার্সিউস অ্যাথেনার দেওয়া ঢালটি ব্যবহার করেছিল।

কারবেরাস: কারবেরাস হল তিন-মাথাওয়ালা একটি কুকুর। পাতালপুরীকে পাহারা দেওয়াই ছিল কারবেরাসের কাজ। জীবিত মাংস ও উষ্ণ রক্ত পান করে এরা এদের ক্ষুধা মেটাতো। বিশাল দানবাকৃতির কারবেরাসকে কেউ কখনো রাগাতো না, এমনকি অনেক দেবতাও কারবেরাসকে ভয় পেতো। হারকিউলিস ইউরেস্থিউসের নির্দেশে পাতালপুরী থেকে কারবেরাসকে মর্তে নিয়ে আসে এবং ইউরেস্থিউসের নির্দেশেই তাকে পাতালপুরীতে ফিরিয়ে নিয়ে যায়।

আর্গুস: এরেস্টরের পুত্র আর্গুস এর পদবী হল ‘গার্ডিয়ান অফ দি হেইফার নিম্প লো’। ভয়ংকর এই দানবের সারা শরীর জুড়ে রয়েছে মোট একশটি চোখ। আর্গুসের চোখে কখনোই ঘুম ভর করে না। কোন ক্ষুদ্র প্রাণীরও ক্ষমতা নেই তার চোখকে ফাঁকি দেবার। জিউস তাকে গরুতে রুপান্তরিত আইও অর্থাৎ হেইফারের ওপর নজর রাখার নির্দেশ দেন, যাতে সে পালাতে না পারে।

পরবর্তীতে জিউস আইওকে মুক্ত করে দেবার সিদ্ধান্ত নেন এবং ঘাতক হেরমেসকে নির্দেশ দেন আর্গুসকে হত্যা করার জন্য। হেরমেস পাথর দ্বারা আর্গুসের একশোটি চোখই খুলে নেয় এবং সেসব চোখের স্থান হয় দেবী হেরার প্রিয় ময়ূরপঙ্খীর লেজে।

 

হাইড্রা: নয় মাথাবিশিষ্ট জলদানব হাইড্রা ছিল জিউসের প্রাচীন চাকর। হাইড্রার নিঃশ্বাস ছিল প্রচণ্ড বিষাক্ত। শুধু তাই নয়, এর একটা মাথা কাটলে, সেই জায়গায় দুইটা মাথা গজাতো। নিজের কৃত কাজের প্রায়শ্চিত্ত করতে ইউরেস্থিউস হারকিউলিসকে নির্দেশ দিলেন হাইড্রাকে হত্যা করার জন্য। হারকিউলিস বারোজন সঙ্গী নিয়ে রওনা হয়।

হাইড্রার নিঃশ্বাস থেকে বাঁচতে নাকমুখ ভালো করে পেঁচিয়ে তারা হাইড্রার প্রতিটি মাথাকে লক্ষ্য করে জ্বলন্ত তীর ছুঁড়তে থাকে। একসময় হারকিউলিসক তার তলোয়ার দিয়ে হাইড্রার একটা মাথা কাটতে সক্ষম হয়। কিন্তু তাতে বিশেষ কোন লাভ হয় না। একটা কাটা মাথার জায়গায় দুটো মাথা গজিয়ে যায়।

পরবর্তীতে হারকিউলিস তার ভাগ্নে আয়োলাসের বুদ্ধিতে মাথা কাটার পর জ্বলন্ত লোহা দিয়ে সেই জায়গা ঝলসে দেয়, ফলে সেখানে আর নতুন মাথা গজাতে না পারে। এভাবেই হারকিউলিস হাইড্রা ধ্বংস করতে সক্ষম হয়।

Facebook
Twitter
WhatsApp