ইসতিয়াক আহমেদ, অনলাইন আপডেট
আজকের দিনের ব্যস্ত রাস্তায় দ্রুত গন্তব্যস্থলে পৌছানোর একটি চমৎকার মাধ্যম হল সাইকেল। এটি যে শুধু আপনাকে দ্রুত গন্তব্যস্থলে পৌছে দেবে তাই নয়, নিয়মিত সাইক্লিং আপনার শরীরকে রাখবে সুস্থ। শরীরের মেদ কমাতে কিংবা শ্বাসকষ্টের সমস্যায় উপকার পেতে চাইলে আজই নেমে পড়ুন সাইকেল নিয়ে। কিন্ত সাইকেল নিয়ে নেমে পড়তে চাইলে আগে তো সাইকেল কিনতে হবে।
সাইকেল কিনতে চান? কিন্ত সাইকেল সম্পর্কে ধারণা নেই? সমস্যা নেই। দেখে নিন সাইকেল কেনার সময় কি কি বিষয়ে খেয়াল রাখবেনঃ
১।বাজেটঃ প্রথমেই ঠিক করে ফেলুন আপনার বাজেট কত। কেননা আপনি কি ধরণের সাইকেল কিনবেন তা নির্ভর করবে আপনার বাজেটের উপর।
২।সিঙ্গেল-গিয়ার নাকি মাল্টি-গিয়ারঃ এরপরই ঠিক করে ফেলুন আপনি কি মাল্টি-গিয়ার সাইকেল কিনবেন নাকি সিঙ্গেল-গিয়ার। আপনার বাজেট যদি হয় ৫০০০-৮০০০ এর মধ্যে তাহলে সিঙ্গেল গিয়ার সাইকেল কেনাই ভাল। এই দামের মধ্যে মেঘনা, প্রিন্স ব্র্যান্ডের ভাল কিছু সাইকেল পাবেন। আর যদি বাজেট হয় ৮০০০ এর বেশী তাহলে কিনতে পারেন মাল্টি-গিয়ার সাইকেল। ভাল মানের বিদেশী ব্র্যান্ডের মাল্টি-গিয়ার সাইকেলের দাম শুরু ১০০০০ টাকা থেকে। বাজেট যদি হয় ১০০০০ এর বেশী তাহলে কিনতে পারেন ফোনিক্স, র্যালে, হিরো কিংবা ফক্সটারের মতন নামকরা বিদেশী ব্র্যান্ডের সাইকেল।
৩।গিয়ার মুভমেন্টঃ সাইকেল কেনার সময় খেয়াল করুন গিয়ার মুভমেন্ট কেমন। অর্থাৎ এক গিয়ার থেকে আরেক গিয়ারে সহজে শিফট করা যায় কিনা। গিয়ার মুভমেন্ট মসৃণ না হলে সেই সাইকেল কখনোই কিনবেন না। গিয়ার কন্ট্রোলিং এর ক্ষেত্রে দু ধরণের সাইকেল আছে। এক ধরণের গিয়ার হাতে ঘুরিয়ে কন্ট্রোল করা হয়। আরেক ধরণের গিয়ার বাটন টিপে কন্ট্রোল করা হয়। বাটন গিয়ারের দাম তুলনামূলকভাবে বেশী হলেও এটিই সাচ্ছন্দ্যময়।
৪।ফ্রেমঃ এরপর যে বিষয়টি খেয়াল করবেন তা হল সাইকেলের ফ্রেম। সাইকেলের ফ্রেম তিন ধরণের হয়ে থাকে।
আয়রন ফ্রেমঃ এই ধরণের ফ্রেম লোহা দিয়ে তৈরী হয়। এই ফ্রেমে তৈরী সাইকেল ওজনে বেশ ভারী হয়।
এলয় ফ্রেমঃ এধরণের ফ্রেম এলুমিনিয়ামের তৈরী হয়। এলয় ফ্রেমে তৈরী সাইকেল ওজনে বেশ হালকা হয়।
কার্বন ফ্রেমঃ কার্বন ফাইবারে তৈরী এই ফ্রেম ওজনে সবচেয়ে হালকা হয়। রেসিং সাইকেলে এই ধরণের ফ্রেম ব্যবহার করা হয়।বাংলাদেশে এই ফ্রেমের তৈরী সাইকেল একটু দুষ্প্রাপ্য এবং দামও অনেক।
ওজনে হালকা হওয়ায় এলয় ফ্রেমে তৈরী সাইকেলের চাহিদাই বেশী। এলয় সাইকেল বহন করাও সুবিধা। সহজেই কাধে নিয়ে দোতলা বা তিনতলায় উঠতে পারবেন। আপনার বাসা যদি হয় দোতলা বা তার উপরে তাহলে আয়রন ফ্রেম সাইকেল কেনা থেকে বিরত থাকুন।
৫।ডুয়াল সাসপেনশনঃ সাইকেলে যদি ডুয়াল সাসপেনশন থাকে তাহলে সেটি না কেনাই ভাল।
৬।ব্রেকঃ খেয়াল করুন ব্রেকটি কি ধরণের। সেটি কি ভি (V ) ব্রেক নাকি ডিস্ক ব্রেক? ভি ব্রেক এর দাম তুলনামূলকভাবে কম। কার্যকারিতাও কম। ডিস্ক ব্রেকের দাম তুলনামূলকভাবে বেশী। এর কার্যকারিতাও বেশী। আপনি যদি স্টান্ট করতে চান অবশ্যই ডিস্ক ব্রেকযুক্ত সাইকেল কিনবেন।
৭।সিটঃ খেয়াল করুন সাইকেলের সিটটি আরামদায়ক কিনা। সিটটি যদি অতিরিক্ত শক্ত হয় তাহলে কিছু সময় সাইকেল চালালেই আপনার পিছনের অংশ ব্যাথা হয়ে যাবে। এর ফলে আপনি লম্বা সময় সাইক্লিং এর আনন্দ থেকে বঞ্চিত হবেন।
৮।টায়ারঃ খেয়াল করুন টায়ারের অবস্থা। ব্রেক করলে কি এটি স্কিড করবে? যদি স্কিড করে তাহলে সেটি না কেনাই ভাল। টায়ারের অবস্থা দেখা খুব বেশী জরুরী যদি আপনি সেকেন্ড হ্যান্ড সাইকেল কেনেন।
১০।চেইনঃ খেয়াল করুন প্যাডল করলে সাইকেলের চেইন স্কিড করছে কিনা। যদি করে তাহলে ঐ সাইকেলটি কেনা থেকে বিরত থাকুন।
১১।সাইকেল কিনুন সাইকেল কেনার পর আপনি কিভাবে এটি ব্যবহার করবেন সেটি মাথায় রেখে। আপনার উদ্দেশ্য যদি হয় সাইকেলে চড়ে অফিস যাওয়া বা শুধু ঘুরে বেড়ানো, তাহলে রেসিং সাইকেল কেনা অর্থহীন। এবং আপনি যদি সাইকেল চালনায় অদক্ষ হন তাহলে কখনোই রেসিং সাইকেল কিনবেন না।
১২। সাইকেল কেনার সময় সাইকেল সম্পর্কে ভাল ধারণা রাখেন এরকম কাউকে সাথে নিয়ে যাবেন।
১৩। সাইকেল চালানোর সময় অবশ্যই হেলমেট পড়বেন। হেলমেটের দাম শুরু ৬০০ টাকা থেকে।
১৪। আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ কথা, ব্যস্ত রাস্তায় কখনোই স্টান্ট করার চেষ্টা করবেন না।