লাইফস্টাইলঃ
কেউ বলে চীন, কেউ বলে ভারত-লেবুর অদি বাসস্থান। তবে দুটি দেশেই প্রচুর পরিমাণ লেবু উৎপাদন হয়। ভারত এবং বাংলাদেশের এমন কোন স্থান নেই যেখানে লেবু উৎপাদন হয় না। লেবুতে প্রোটিন, ফ্যাট, কার্বহাইড্রেটস, ক্যালসিয়াম ফসফরাস, আয়রন, ভিটামিন ‘এ’, ‘বি’, ‘সি’ প্রভৃতি প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। লেবুর ঔষধিগুণের বর্ণনা নিম্নে দেয়া হলো:
খাবারে অরুচি ও পেটফাঁপায়ঃ
নানা কারণে খাদ্যে অরুচি দেখা দিতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় যেকোন কারণে হজম ক্ষমতা কমে যায় তখন সবতেই অরুচি, জোর করে কিছু খেলেই পেট ফেঁপে যায; অনেক সময় রোগভোগের পার বদহজম দেখা দেয়। আবার অতিরিক্ত ক্রিমি হলেও খাবারে অরুচি ও পেটফাঁপা বদহজম দেখা যায়। গর্ভাবস্থায় অরুচি প্রকৃতিকে ঠিক রোগের পর্যাযে না বললেও তার জন্য কিছু না কিছু চিকিৎসা দরকার হয়। তবে সব ক্ষেত্রেই একরকম চিকিৎসা বাঞ্ছনীয় নয়। খাবারে অরুচি বা পেটফাঁপায় সকালে খালি পেটে দুই কাপ ঠান্ডা কিংবা গরম পানিতে একটা পাতি লেবু বা কাগজী লেবুর রস নিংড়ে তা পান করতে হবে এর সাথে একটু লবন মিসানো যেতে পারে। অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে সকাল বিকাল দুই বেলা ওইভাবে পান করলে ভাল ফল পাওয়া যায়া এবং
গর্ভাবস্থায় কেবল অরুচি হলে কাগজী বা গোঁড়া লেবুর আচার অল্প মাত্রায় ভাতের সাথে খেলে বা পানিতে মিশিয়ে পান করলে ভাল ফল পাওয়া যায়।
কোষ্ঠবদ্ধতায়ঃ
কোষ্ঠবদ্ধতা সাময়িক কিংবা দীর্ঘদিনের যেমন হতে পারে তেমনি কোন না কোন রোগ ভোগের জন্যও হওয়া স্বাভাবিক। এসব ক্ষেত্রে অবস্থা বুঝে নেবুর প্রয়োগ করতে হবে। সায়িকভাবে দু’চার দিন দেখা দিলে বা দীর্ঘ রোভোগের পর শারীরিক দুর্বল অবস্থায় বা বা গর্ভাবস্থায় কোষ্ঠবদ্ধতা হলে প্রত্যক দিন সকালে খালি পেটে এক গ্লাস হালকা গরম পানি একটা পাতি কিংবা কাগজী নেবুর রস নিংড়ে পর পর এক সপ্তাহ পান করলে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসবে। দীর্ঘদিনের কোষ্ঠবদ্ধতা হলে কিংবা অর্শ রোগের জন্য প্রত্যেক দিন দু’টি নেবুর রস উপরিউক্ত পদ্ধতিতে বেশ কিছুদিন (একমাস) ব্যবহার করতে হবে।
সন্ধিবাতেঃ
সোজা কথা গেঁটে বাতের নানা জাত আছে, সে বিচার পরীক্ষা নিরাক্ষা মাধ্যমে নির্নয় করার আগেও নেবুর রস খাওয়া আরম্ভ করা যেতে পারে। রোগ উপলদ্ধি করার সাথে সাথে নেবু খাওয় আরাম্ভ করলে যন্ত্রণার উপশম হবে। ইউরিক এসিডের আধ্যিক্যবশতঃ যে যন্ত্রণা হতে থাকে, তা কিছুদিনের মধ্যে প্রায় একেবারে চলে যায়। অন্যান্য কারণে সন্ধিবাতে চিকিৎসার সঙ্গে সঙ্গে প্রতিদিন ১টি করে নেবু এক গ্লাস পানির সাথে মিসিয়ে খাওয়া যেতে পারে।
ঠান্ডায়ঃ
যদি অঠাৎ ঠান্ডা লেগে সর্দি হয়ে নাক দিয়ে অনবরত পনি ঝরতে থাকে; সেই সাথে যদি শরীরে ম্যাজম্যাজে ভাব থাকে; তবে এক কাপ হালকা গরম পানিতে ২ চামচের মতে নেবুর রস মিশিয়ে এক ঘন্টা পর পর পান করলে ভাল উপকার পাওয়া যায়। সেই সাথে নেবু দিয়ে পরিমাণমত মধু মিশিয়ে চা পান করলেও ভাল উপকার পাওয়া যায়।
শ্বাস–কাসেঃ
হাঁপের টান, সেইসাথে যদি কাসি হয় (হৃদরোগে কাজ হবেনা) এক্ষেত্রে পাতি, কাগজী, জামী, গোঁড়া যেকোন নেবু অর্ধেক করে কেটে ভালভাবে লবণ লগিয়ে হালকা আগুনের উপর বসিয়ে গরম করলে লবন নেবুর সাথে মিশে যাবে; সেই অবস্থায় নামিয়ে সহ্যমত গরম নেবুর রস ফোঁটা ফোঁটা কিছুক্ষণ পর পর জিহ্বায় ছাড়তে হবে এবং ধীরে ধীরে খেতে হবে। তা হলে শ্বাস কাসে ভাল উপকার পাওয়া যাবে। এভাবে দিনে অন্তত
২-৩ বার খেতে হবে।
স্বরভঙ্গঃ
ঠান্ড লেগে হঠাৎ সর্দি-কাসি হয়ে গলা বসে যেতে পারে, অবার অন্য কোন রোগের কারণেও গলা বসে যেতে পারে। কিংবা বেশি চিৎকার-চেঁচামেচি বা রাত জাগলে যদি গলা বসে যায়। তবে উপরিউক্ত ভাবে দিনে ২-৩ বার নেবু ও লবন গরম করে রস খেলে ভাল ফল পাওয়া যায়।
পুরাতন জ্বরেঃ
ম্যালেরিয়া, ইনফ্লয়েঞ্জা প্রভৃতি জ্বর ভাল হওয়ার পর যদি মাঝ মাঝে আবার অল্প অল্প জ্বর হয় এবং কোন ঔষধে কাজ না হয়। বরং দুর্বলতা বাড়ে, মেজাজ খিটমিটে হয়ে যায়; অন্যদিকে ক্ষুধা কম হয় অর্থৎ অরুচি হয়; তবে প্রথমে প্রত্যেকদিন সকালে খালি পেটে দুই কাপ ঠান্ডা পানির সাথে একটা পাতি কিংবা কাগজি নেবু মিশিয়ে পান করলে ভাল উপকার হয়।
এইভাবে যকৃতের ক্রিয়াহ্রাসে, অম্লপিত্তে, পুরাতন অতিসার, অধিক রক্তস্রাবে রক্তার্শে অপুষ্টিতে রোগান্তিক/প্রসবান্তিক দুর্বলতায়, ক্লান্তি, মেদবৃদ্ধিতে, খুসকিতে, দাদে, মুখের দাগে, মেচতায়, ছুলিতে, প্রভৃতি অনেক রোগে নেবুর ঔষধি গুণ বিরাজমান। খসকি, দাদ মখের দাগে, মেচতায়, নেবু ঘষলেই উপকার পাওয়া যায়।