মিডল এজ ক্রাইসিস :
প্রেম একটি জটিল মনস্তাত্ত্বিক ব্যাপার। কে, কেন, কোথায়, কার প্রেমে পড়বে, তা ঠিক করে বলা মুশকিল। তবে গড়পরতা হিসেবে করে প্রেমে পড়ার কিছু কারণ বের করা যায়। বিশেষ করে মধ্য বয়সে প্রেমে পড়ার বিষয়টি। মধ্য বয়সে বা শেষ যৌবনে মানুষের কিছু শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন হয়।
আসে কিছু হরমোনাল পরিবর্তনও। এর ফলে মানুষ কিছুটা চাপের মুখে থাকে। অনেকেই হয়ে ওঠেন বিধ্বংসী। যৌবন চলে যাচ্ছে, আমার আর কোনো আবেদন থাকবে – এই চিন্তা তাদের ঠেলে দেয় জোর নতুন কিছু করার দিকে। পাশ্চাত্যে এ সমস্যাটিকে বলা হয় ‘মিডল এজ ক্রাইসিস’। এ চিন্তাচেতনার ফলস্বরূপ অনেকে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে যান। এমনকি পরকীয়াতেও। অবিবাহিত মধ্যবয়সী নারী-পুরুষদের জন্য ব্যাপারটি ভালো হলেও বিবাহিতদের জন্য তা ডেকে নিয়ে আসে নেতিবাচক ব্যাপার-স্যাপার।
প্রেম নাকি পরকীয়া? :
বিবাহিতদের ক্ষেত্রে প্রেমের চেয়ে পরকীয়া শব্দটাই বেশি যুতসই। এই শব্দটার সাথে কমবেশি সবাই পরিচিত। পাশ্চাত্যের মতোই আমাদের সমাজেও পরকীয়ার হার দিনকে দিন বেড়ে চলছে। পরকীয়া মানুষ কেন করে? এরও রয়েছে নানা রকম কারণ। সংসারে অশান্তি, বিবাহিত জীবনে সুখী না হওয়া, স্বামী বা স্ত্রীর সাথে বনিবনা না থাকা ইত্যাদি কারণে বিবাহিত নারী ও পুরুষরা পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন।
পরকীয়া প্রেমের ফলাফল হয় মারাত্মক। সংসারে ভাঙন, ডিভোর্স তো হয়ই, নৈতিকতারও হয় অবনতি। পরকীয়াকে কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। না পারিবারিক ভাবে, না সামাজিক ভাবে, না ধর্মীয় ভাবে! ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে এটাকে পাপ হিসেবে গণ্য করা হয়। পরকীয়ায় লিপ্ত ব্যক্তিকে সমাজ অসম্মানের দৃষ্টিতে দেখে। আর যাদের থাকে সন্তান-সন্ততি, তাদের ক্ষেত্রে পরকীয়া ডেকে নিয়ে আসে ভয়াবহ পরিণতি। পিতা বা মাতার ভুলের ফল ভুগতে হয় সন্তানদের।
মধ্য বয়সে প্রেম কি সবসময়ই ভুল? :
অনেকেরই অনেক বয়স হয়ে যাবার পর বিয়ে হয় না। কেউ মনের মতো সঙ্গী খুঁজে পান না, কেউ বা সময় পার করে দেন ক্যারিয়ারের পেছনে। অনেকেই সিদ্ধান্ত নেন সারাজীবন বিয়ে না করে থাকবেন। এমন মানুষদের জন্য মধ্য বয়সের প্রেম কিন্তু আশীর্বাদরূপে আসে। তাঁরা নিজের জীবন গুছিয়ে নিতে পারেন নতুন করে। পছন্দের মানুষটিকে বিয়ে করে হতে পারেন থিতু।
ফলে এই দৃষ্টিকোণ দেখলে দেখা যায় যে, মধ্য বয়সের প্রেম সব সময় নেতিবাচক নয়। বরং কিছু মানুষের জন্য তা সুফল বয়ে আনে। একই কথা প্রযোজ্য ডিভোর্সড নারী-পুরুষদের জন্যও। তাঁরাও নতুন করে তাঁদের জীবন শুরু করতে পারেন।
শুধুই শারীরিক চাহিদা :
তেলে জ্বলতে থাকা বাতি নিভে যাবার আগে দপ্ করে একবার জ্বলে উঠে নিভে যায়। একই ব্যাপার ঘটে মানুষের ক্ষেত্রেও। যৌবন ফুরিয়ে যাবার আগ দিয়ে মানুষের শারীরিক চাহিদা হঠাত্ করেই বেড়ে যায়। এই চাহিদার কারণেও অনেকেই জড়িয়ে পড়েন প্রেমের সম্পর্কে। তবে এ ধরনের সম্পর্ক সাধারণত গড়ে ওঠে বয়সে ছোট কারো সাথে। নারী এবং পুরুষ উভয়েই জড়িয়ে যান বয়সে ছোট কারো সাথে। এর ফলাফলও ভালো হয় না। কারণ শারীরিক চাহিদার উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠা সম্পর্কের কোনো শুভ পরিণতি থাকে না। স্বাভাবিকভাবেই এসব সম্পর্ক টিকে থাকে স্বল্প দিন, তবে ছাপ রেখে যায় ব্যাপক। নৈতিক অবনতি, শারীরিক সমস্যা, বিবেকের দংশন, সামাজিক লাঞ্ছনা ছাড়া এ ধরনের সম্পর্কে আর কিছুই পাওয়া যায় না।