জীবন বাঁচাতে এই অভ্যাসগুলো রপ্ত করুন…


লাইফস্টাইল:

আমাদের প্রায় সকলেই জানি যে গাড়ি চালানোর সময় কখনোই মোবাইলে খুদে বার্তা লেখা ঠিক নয় এবং গায়ে আগুন লাগলে সঙ্গে সঙ্গে হাঁটা বন্ধ করে মাটিতে শুয়ে পড়ে গড়াগড়ি দিতে হবে। তবে জীবনে এমন অনেক পরিস্থিতি আসতে পারে যখন আমরা দ্রুত এবং কার্যকর সিদ্ধান্ত নিতে পারি না। এমন অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতিগুলো মোকাবেলায় রইলো ১৭টি পরামর্শ

১. হাঁটার সময় ফোন ব্যবহার করবেন না একই সময়ে হাঁটা ও ফোন ব্যবহার করলে মস্তিষ্ক ঠিক মতো কাজ করে না। কারণ একই সঙ্গে হাঁটা ও ফোন ব্যবহার করার জন্য প্রচুর পরিমাণ মনোযোগ দরকার হয়। এতে চারপাশে কী ঘটছে না ঘটছে মস্তিষ্ক তা শনাক্ত করতে ব্যর্থ হয়। হয়তো দ্রুত গতিতে একটি গাড়ি আপনার দিকে ধেয়ে আসছে কিন্তু আপনার মস্তিষ্ক তা শনাক্ত করতে ব্যর্থ হবে; আপনি হয়তো কিছু একটা দেখলেন কিন্তু বুঝতে পারলেন না। একে বলা হয় ‘অমনোযোগ অন্ধত্ব’।

২. গাড়ির লুকিং গ্লাসটি অ্যাডজাস্ট করে নিন
গাড়ি চালানো শুরু করার আগে লুকিং গ্লাসটি ঠিকমতো অ্যাডজাস্ট করে নিন। যাতে পেছনে থাকা যে কোনো বস্তু ঠিকমতো দেখতে পান।

৩. ঠাণ্ডার সময় উলের কাপড় পরুন এবং শুকনো থাকুন দেহের তাপমাত্রা ঠিক রাখার জন্য ঠাণ্ডার দিনে সুতি কাপড়ের চেয়ে বরং উলের তৈরি কাপড় বেশি পরুন। উলের কাপড় দেহের অতিরিক্ত আর্দ্রতা শুষে নিয়ে আপনার দেহের তাপমাত্রা ঠিক রাখতে সহায়ক হবে। আর সবসময় শুকনো থাকার চেষ্টা করুন।

৪. তেষ্টা মেটাতে বরফ খাবেন না
কোনো বস্তুকে রুপান্তরিত করার জন্য মানবদেহের প্রচুর পরিমাণ শক্তি ব্যয় করতে হয়। সুতরাং একেবারে নিরুপায় না হলে তেষ্টা মেটাতে বরফ গিলবেন না। কারণ বরফকে পানিতে রুপান্তরে দেহের যে পরিমাণ তাপ ক্ষয় হবে তা অনেক বেশি মূল্যবান।

৫. বিমান পানিতে পড়লে সঙ্গে সঙ্গেই লাইফ জ্যাকেট পরবেন না
দুর্ঘটনার কারণে বিমান পানিতে পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই যদি লাইফ জ্যাকেট পরেন তাহলে আপনি আর বের হতে পারবেন না। তারচেয়ে বরং আগে সাতরে বের হওয়ারপর লাইফ জ্যাকেট পরে ভেসে থাকার চেষ্টা করুন।

৬. গলায় আটকানো খাবার নিজেই বের করুন
গলায় আটকে পড়া কোনো খাবারের টুকরো বের করার জন্য অন্যের সহায়তা নেওয়ার কোনো দরকার নেই। আপনার শক্তিশালি হাতটি মুষ্টিবদ্ধ করে পাঁজরের খাঁচার নিচে নাভীর একটু ওপরে রাখুন। এরপর অন্য হাতের তালুটি মুষ্টিবদ্ধ হাতের ওপর রেখে দৃঢ়ভাবে চাপ প্রয়োগ করুন। এরপর মুষ্টিবদ্ধ হাতটি ওপর-নিচ করে চাপ প্রয়োগ করতে থাকুন যতক্ষণ না গলায় আটকানো খাদ্যের টুকরোটি বের হয়ে আসে।

৭. নতুন কোথাও গেলে সঙ্গে সর্বোচ্চ শক্তিশালি এন্টিহিস্টামিন রাখুন
আপনি কখনো আগে থেকেই বলতে পারবেন না নতুন কোথাও বেড়াতে গিয়ে আপনি এমন কিছুর সংস্পর্শে আসবেন কিনা যা আপনাকে এলার্জিতে আক্রান্ত করবে। বিশেষ করে ক্যাম্পিং বা পর্বতারোহনের মতো রোমাঞ্চকর অভিযাত্রার সময় সঙ্গে অবশ্যই সর্বোচ্চ মাত্রার শক্তিশালি এন্টিহিস্টামিন রাখুন।

৮. রুল অফ থ্রি
বাতাস ছাড়া মানুষ সর্বোচ্চ তিন মিনিট বেঁচে থাকতে পারে। চরম প্রতিকুল আবহাওয়ায় সর্বোচ্চ তিন ঘন্টা গৃহহীন অবস্থায় থাকতে পারে। এবং খাদ্য ছাড়া সর্বোচ্চ তিন সপ্তাহ বেঁচে থাকতে পারে। সুতরাং এর চেয়ে বেশি সময় ধরে ঝুঁকি নিতে যাবেন না।

৯. রান্নার তেলে আগুন লাগলে চুলা বন্ধ করে পাত্রটি ঢেকে রাখুন
রান্নার পাত্রের তেলে আগুন লাগলে তা নেভানোর জন্য কখনোই পানি ঢালবেন না। কারণ পানির অনুগুলো পাত্রের তলায় গিয়ে দ্রুত বাষ্পে পরিণত হয়। বাষ্প উবে আগুনের শিখাও আরো বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।

১০. শরীরে ছুরি বা ধারালো কোনো বস্তু ঢুকে গেলে টেনে বের করবেন না শরীরে ছুরি বা ধারালো কোনো বস্তু ঢুকে গেলে তা টেনে বের করার চেষ্টা করলে বরং রক্তক্ষরণ বাড়বে। সুতরাং ডাক্তারের কাছে বা হাসপাতালে যাওয়ার আগ পর্যন্ত শুধু রক্তক্ষরণ বন্ধ করার চেষ্টা করুন।

১১. বেশিরভাগ বিমান দুর্ঘটনাই ঘটে উড্ডয়নের তিন মিনিট পরে বা অবতরনের আট মিনিট আগে
৮০ শতাংশ বিমান দুর্ঘটনাই এই দু্ই সময়ে। এ কারণেই বিমান নিরাপত্তা কর্তৃপক্ষ +৩/-৮ রুলস মেনে চলে। সুতরাং আপনিও এই দুই সময়ে বিশেষভাবে সতর্ক থাকুন; পডকাস্ট বা মুভিতে নিজেকে হারিয়ে ফেলবেন না।

১২. ঘরে আগুন লাগলে আগুনে পুড়ে নয় বরং শ্বাস বন্ধ হয়েই বেশিরভাগ মৃত্যুর ঘটনা ঘটে
সুতরাং মাটিতে শুয়ে পড়ে কম কম শ্বাস গ্রহণের চেষ্টা করুন যাতে ফুসফুসের ভেতর বেশি ধোয়া ঢুকে শ্বাস চলাচল বন্ধ না হয়ে যায়।

১৩. জনাকীর্ণ স্থানে জখম হলে মাত্র একজনের কাছে সাহাজ্য চান
জনাকীর্ণ স্থানে দুর্ঘটনার কবলে পড়লে বা জখম হলে সবার কাছে সাহাজ্য না চেয়ে বরং মাত্র একজনের কাছে সাহাজ্য প্রার্থনা করুন। তাহলেই আপনার প্রাণে বাঁচার বেশি সম্ভাবনা থাকবে। কারণ গবেষণায় দেখা গেছে, দুর্ঘটনা স্থলে যত বেশি লোক থাকবে ততই আপনাকে বাঁচাতে কারো এগিয়ে আসার সম্ভাবনা কমতে থাকবে। কারণ সকলেই তখন অন্যরা এগিয়ে আসবে এই আশায় নিজেরা নিষ্ক্রিয় থাকে। সুতরাং দুর্ঘটনার কবলে পড়ার পর বা জখম হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই যে কোনো একজনকে বেছে নিয়ে তার কাছেই সহযোগিতা প্রার্থনা করুন।

১৪. তীব্র ফ্ল্যাশলাইটই হতে পারে আক্রমণকারীর বিরুদ্ধে আপনার সবচেয়ে বড় অস্ত্র
রাতের বেলায় সঙ্গে লাঠি বা অস্ত্র বহনের বদলে বরং একটি তীব্র আলো ছড়ানো ফ্ল্যাশ লাইট রাখুন। এতে কেউ আপনার ওপর হামলা করতে আসলে তার চোখে হঠাৎ ৩০০+ লুমেন আলো ফেলে তাকে হতচকিত করে দিন এবং পালিয়ে আসুন।

১৫. পর্বতারোহন বা জঙ্গলে ভ্রমণ করতে গিয়ে পথ হারালে পানির স্রোত বা বেড়া খুঁজুন
যে কোনো পানির স্রোত সাধারণত উঁচু পাহাড় থেকে নেমে নিচের দিকে যায় এবং বড় কোনো জলাধারে গিয়ে মিলিত হয়। আর বেড়া প্রায় সবসময়ই সড়ক বা কোনো বাড়ি-ঘর বা স্থাপনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকে।

১৬. অস্থায়ীভাবে পানি সংরক্ষণের জন্য কনডম ব্যবহার করুন
কনডম অবিশ্বাস্যরকম ভাবে নমণীয়। আপনার যদি কখনো দ্রুত অনেক পরিমাণ পানি সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয় তাহলে তাহলে কনডম ব্যবহার করতে পারেন। একটি কনডমে সর্বোচ্চ এক গ্যালন পর্যন্ত পানি ধরে রাখা সম্ভব। কনডম এমনকি পানি লেগে নষ্ট হতে পারে এমন জিনিস সংক্ষণের জন্যও ব্যবহৃত হতে পারে- যেমন ম্যাচ এবং ওয়াকিটকি।

১৭. দুর্যোগের সতর্কতা সঙ্কেত পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এক্সিট খুঁজে বের করুন
প্রাকৃতিক বা কৃত্রিম কোনো দুর্যোগের সতর্কতা সঙ্কেত পাওয়ার পরও লোকের মধ্যে সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে আসার পর আমি বের হব এমন প্রবণতা কাজ করে। অথচ তাদের জীবন স্পষ্টতই ঝুঁকির মধ্যে আছে। মনোবিজ্ঞানীরা এই আচরণের নাম দিয়েছেন, “নরমালসি বায়াস”। এ থেকে বেরিয়ে আসার একমাত্র উপায় হলো, দুর্যোগের সতর্কতা সঙ্কেত পাওয়া মাত্রই বের হওয়ার রাস্তা খুঁজতে হবে। বিপজ্জনক পরিস্থিতি থেকে উদ্ধার পাওয়ার জন্য নিজেকে সবসময়ই মানসিকভাবে প্রস্তুত রাখার মধ্য দিয়ে লোকে অতন্দ্র প্রহরীতে পরিণত হয়।

Facebook
Twitter
WhatsApp