একজন খুনীর জীবনের শেষ বাক্য থেকে নাইকির শ্লোগান!

 

ইসতিয়াক আহমেদ, লাইফস্টাইল কন্ট্রিবিউটার, সময়ের কন্ঠস্বর

বিশ্ববিখ্যাত ব্র্যান্ড নাইকির নাম শোনেনি এরকম মানুষ মনে হয় পৃথিবীতে কেউ নেই। নাইকির বিখ্যাত শ্লোগান হল, “জাস্ট ডু ইট”। কিন্ত অনেকেই জানেন না এই শ্লোগানটার উৎপত্তির কাহিনী। শ্লোগানটা এসেছে একজন দুর্ধষ খুনী জীবনের শেষ কথা থেকে। তার নাম গ্যারি গিলমোর। ১৯৪০ সালের ৪ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসে জন্মগ্রহণ করেন এই কুখ্যাত সিরিয়াল কিলার। তার বাবার নাম ফ্র্যাংক গিলমোর এবং মায়ের নাম বেসি গিলমোর।

গ্যারি গিলমোর ছোটবেলা থেকেই প্রচন্ড মেধাবী ছিলেন। হাই স্কুলে পড়ার পড়াকালীন এক আইকিউ টেস্টে তিনি ১৩৩ স্কোর করেন। কিন্ত, তিনি তার মেধা সম্পুর্ণ অপব্যায় করেন অপরাধ জগতে। মাত্র ১৪ বছর বয়সে বন্ধুর সাথে গাড়ি চুরি করতে যেয়ে পুলিশের কাছে ধরা পড়েন গ্যারি। সপ্তাখানেক আটক রাখার পর পুলিশ ওয়ার্নিং দিয়ে তার বাবার জিম্মায় তাকে ছেড়ে দেয়।

কিন্ত এর মাত্র দু সপ্তাহ পর আবার তিনি পুলিশের হাতে আটক হন এবারও একই অপরাধ। গাড়ি চুরির চেষ্টা। এবার আদালতের নির্দেশে তাকে কিশোর সংশোধনাগারে পাঠানো হয়। কিছুদিন পর তিনি মুক্তিও পান। কিছুদিন পর আবারও তাকে গাড়ি চুরির মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়। এবার আদালত তাকে কারাগারে বন্দী রাখার নির্দেশ দেয়।

১৯৬১ সালে গ্যারির বাবা ফ্র্যাংক গিলমোর ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। ১৯৬২ সালের জুনে ফ্র্যাংক মারা যান।  তখনও গ্যারি কারাগারে। একজন জেলার গ্যারিকে তার পিতার মৃত্যু সংবাদ দেয়। এতে করে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন গ্যারি। হাতের কবজি কেটে আত্মহত্যার চেষ্টাও করেন তিনি।

ওই বছরই তিনি জেল থেক মুক্তি পান। ১৯৬৪ সালে আবারও গ্যারিকে গ্রেপ্তার করা হয় ডাকাতির অপরাধে। এবার আদালত তাকে ১৫ বছরের কারাদন্ড দেয়। কারাগারে ভাল আচরণের জন্য ১৯৭৬ সালের এপ্রিলে তাকে কিছু শর্ত সাপেক্ষে মুক্তি দেয়া হয়।

জেল থেকে বেরিয়ে তিনি তার এক চাচার জুতা তৈরীর কারখানায় কাজ নেন। কিছুদিন ভালই চলছিল। কিন্ত, এরপরই আবার গ্যারি তার পুরাতন জীবনে ফিরে যান। মদ, জুয়া, মাদক, মারামারি, চুরি এসবে আবার জড়িয়ে পড়েন তিনি।

১৯৭৬ সালের ১৯ এ জুলাই এক গ্যাস স্টেশনে ডাকাতি করতে যান গ্যারি। এসময় বাধা দিতে এলে ম্যাক্স জেসন নামের এক কর্মীকে খুন করেন গ্যারি। পরদিন এক মোটেলে ডাকাতি করতে গেলে বেনি বুশেল নামের এক ম্যানেজারকে খুন করে ফেলেন গ্যারি। বুশেলকে খুন করার সময় অসাবধানতাবশত নিজের হাতেই গুলি লাগে।

গ্যারি ডাকাতি করে বাড়ি ফিরলে গ্যারির হাতের ব্যান্ডেজ এবং ওষুধ দেখে তার কাজিন ব্রেন্ডার সন্দেহ হয়। গ্যারিকে এব্যাপারে প্রশ্ন করলে উত্তর শুনে সন্দেহ আরো বেড়ে যায় ব্রেন্ডার। তিনি পুলিশকে ফোন করে জানান। পরে পুলিশ এসে গ্যারিকে জিজ্ঞাসাবাদ করতেই সত্যি ঘটনাটা প্রকাশ হয়ে পড়ে। গ্যারিকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়।

আদালত গ্যারিকে “ফায়ারিং স্কোয়াডে” মৃত্যদন্ডের নির্দেশ দেয়। ১৯৭৭ এর ১৭ই জানুয়ারী গ্যারির মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়। গুলি করার আগে জিজ্ঞেস করা হয় তিনি কিছু বলতে চান কিনা। তখন তিনি বলেন, “লেটস ডু ইট”। এই কথাটাই একটূ পরিবর্তন করে পরবর্তীতে নাইকি তাদের শ্লোগান হিসেবে ব্যাবহার করে।

Facebook
Twitter
WhatsApp