মোঃ সাইফুল ইসলাম, লাইফস্টাইল কন্ট্রিবিউটার, অনলাইন আপডেট। ছুটিরদিনে অবসরে যারা ঘুরতে ভালবাসেন তাদের জন্য মনোরম দুটি স্থান হচ্ছে দিনাজপুরের কান্তজীর মন্দির ও রামসাগর। স্থান দুটিতে গেলে আপনি হারিয়ে যাবেন দু-তিনশত বছরের ইতিহাসের পাতায়। ঘুরতে ঘুরতে জানবেন পুরনো ইতিহাস। সেইসাথে মন্দিরে গেলে দেখবেন দেশের সর্বোৎকৃষ্ট টেরাকোটা শিল্পের নিদর্শন।
কান্তজীর মন্দিরঃ দিনাজপুর শহর থেকে মাত্র ২০ কিলোমিটার উত্তর ও কাহারোল সদর উপজেলার ৭ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে সুন্দরপুর ইউনিয়নের কান্তনগর গ্রামে অবস্থিত কান্তজীর মন্দির। মন্দিরের পাশেই প্রবাহিত হচ্ছে টেঁপা নদী।
রাজা প্রাণনাথ মন্দিরটির নির্মাণ কাজ শুরু করেন। তবে তিনি মন্দিরের সম্পন্ন কাজ দেখে যেতে পারেননি। ১৭২২ সালে তার মৃত্যুর পর তারই পোষ্যপুত্র মহারাজা রামনাথ রায় ১৭৫২ সালে এর নির্মাণ কাজ সমাপ্ত করেন। তিনতলা বিশিষ্ট মন্দিরটি রাজা গিরিনাথ পরবর্তীতে ব্যাপক সংস্কার করেন।
মন্দিরের বাইরের দেয়ালে পোড়ামাটির ফলকে রামায়ণ, মহাভারত ও পৌরাণিক কাহিনী লেখা রয়েছে। প্রধান দেবতা কৃষ্ণ। এতে প্রায় ১৫০০০ এর মত টেরাকোটা টালি রয়েছে।
মন্দির প্রাঙ্গন আয়তাকার হলেও পাথরের ভিত্তির উপর দাঁড়ানো ৫০ ফুট উচ্চতার মন্দিরটি বর্গাকার। চারদিক থেকে দেখতে একই লাগবে। এর নিচতলায় ২১টি, দ্বিতীয় তলায় ২৭টি ও তৃতীয় তলায় ৩টি করে খিলানযুক্ত দরজা রয়েছে।
রামসাগরঃ দিনাজপুর শহরের দর্শনীয় ও ইতিহাস সমৃদ্ধ স্থানের মধ্যে আরেকটি উল্লেখযোগ্য স্থান হল রামসাগর। শহর থেকে মাত্র ৮ কিলোমিটার দক্ষিণে সবুজ গাছপালায় ঘেরা জাতীয় উদ্যানের ভিতর রয়েছে দেশের সর্ববৃহৎ এ দিঘীটি। চারদিকে ভেষজ, ঔষধি ও ফলদ বৃক্ষে শোভিত সাগরটির দৈর্ঘ্য ৩৩৯৯ ফুট এবং প্রস্থ ৯৯৮ ফুট। এটির খননকাল ১৭৫০-১৭৫৫ সাল।
কথিত আছে, অতি প্রাচীনকালে বৃষ্টির অভাবে খরা দেখা দেয়। এ অবস্থায় খাদ্য ও পানীয় জলের অভাবে অনেক জীবন শেষ হয়। রাজা রামনাথ তৎকালীন ৩০ হাজার টাকা ব্যয় করে ১৫ লাখ শ্রমিকের মাধ্যমে খনন করেন দিঘীটি। কিন্তু দিঘীতে উঠলনা এক ফোঁটা পানি। স্বপ্নাদেশ অনুযায়ী যুবরাজ দিঘীতে প্রাণ বিসর্জন দিয়েছিলেন। তারপরই পানিতে ভরে ওঠে দিঘীটি। পানীয় জলের অভাব মিটলো। যুবরাজের স্মৃতি অমর হয়ে রইল। দিঘীটির নাম হল রামসাগর।
যেভাবে যাবেন: ঢাকা থেকে দিনাজপুর বাস-ট্রেনযোগে সহজেই আসা যায়। বিমানে আসতে পারেন সৈয়দপুর।
শহর থেকে ইজিবাইকে যাবেন রামসাগর। আর মন্দির যাবেন বাস দিয়ে কান্তনগর মোড়ে। তারপর হাঁটলে ৫ মিনিট লাগবে মন্দির যেতে। মন্দিরে প্রবেশে কোন টাকা লাগবে না কিন্তু রামসাগরে টিকেট প্রতি ১০ টাকা লাগে।
থাকার ব্যবস্থা: থাকার জন্য শহরে রুম প্রতি মাত্র ৪০০-৫০০ টাকায় অনেক আবাসিক হোটেল পাবেন। এগুলোর মধ্যে ইউনিক, মুন্সী হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্ট উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও রয়েছে পর্যটন মোটেল। সাগরের সাথে সরকারি বাংলো থাকলেও মন্দিরের কাছে থাকার মত ব্যবস্থা নেই।
মন্দির অথবা সাগর দুটোতেই রয়েছে নিরিবিলি, শান্ত ও মনোরম পরিবেশ। যেকোন দিন বিকেলের সময়টা এই স্থানগুলো ঘুরে আসুন। কারণ বিকেলের পরিবেশ আরো মনোমুগ্ধকর হয়।
সূত্র: উইকিপিডিয়া, মন্দিরে ইতিহাস সম্বলিত পুস্তিকা।
ছবি: কায়সার রহমান ও লেখক।