কানিজ ফাতেমা, লাইফস্টাইল কন্ট্রিবিউটর, অনলাইন আপডেট
“আকাশ মন্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টির দিন হতেই আল্লাহর বিধান আল্লাহর নিকট গণনায় মাস বারটি । তন্মধ্যে চারটি নিষিদ্ধ মাস। এটি সুপ্রতিষ্ঠিত বিধান। সুতরাং এ নিষিদ্ধ মাস গুলোর মধ্যে তোমরা নিজেদের মধ্যে জুলুম করোনা’’ (সুরা তাওবাঃ আয়াত-৩৬)
চারটি হারাম মাস হলোঃ মুহাররাম, রজব, জিলকদ ও জিলহজ্ব মাস। এ মাস গুলো ইসলামী শরীয়তে বিশেষ ভাবে সম্মানিত এগুলোতে ঝগড়াঝাটি বা যুদ্ধ বিগ্রহ নিষিদ্ধ। এ মাস গুলোর মধ্যে মুহাররাম মাস কে আল্লাহর মাস বলে উল্লেখ করা হয়েছে। রাসুল (সাঃ) বলেন “রমজানের পরে সর্বোত্তম সিয়াম হলো আল্লাহর মাস মোহাররম মাস” (সহীহ মুসলিম)
এ মাসে ১০ তারিখে আশুরার দিনে সিয়াম পালনের বিশেষ ফজিলত রয়েছে। রাসুল (সাঃ) বলেনঃ “এ দিনের সিয়াম গত এক বছরের পাপ মার্জনা করে”। (সহীহ মুসলিম)
এ দিনে রাসুল (সাঃ) নিজে সিয়াম পালন করতেন এবং তাঁর উম্মতকে সিয়াম পলনে উৎসাহ দিয়েছেন। এবং ১০ তারিখের সাথে ৯ বা ১১ তারিখেও সিয়াম পালন করতে উৎসাহ দিয়েছেন।
এ দিনে মহান আল্লাহ তাঁর রাসুল মুসা (আঃ) ও তার সঙ্গী বনী ইসরাঈলকে ফিরাউনের হাত থেকে উদ্ধার করেন এবং ফিরাউন ও তার সঙ্গীদেরকে ডুবিয়ে মারেন।
হযরত মোহাম্মদ (সঃ)এর ইন্তিকালের অর্ধশতাব্দী পরে ৬১ হিজরীর মুহাররম মাসের ১০ তারিখে আশুরার দিনে তাঁর প্রিয়তম নাতি হুসাইন (রাঃ) কারবালার প্রান্তরে শহিদ হন এ ঘটনা মুসলিম উম্মাহর মধ্যে চিরস্থায়ী প্রভাব বিস্তার করে।
মুসা (আঃ) ও বনী ঈসরাঈলগণ মুক্তির ঘটনাকে কেন্দ্র করে এ দিনটিকে ইহুদীগণ সম্মান করত।ইহুদী সমাজে এ দিনটি সম্পর্কে অনেক কল্প-কাহিনিও প্রচলিত ছিল। পরবর্তীতে তা মুসলিম সমাজেও বিভিন্ন ভাবে প্রবেশ করেছে। মুহাররম ও আশুরা সম্পর্কে প্রচলিত নিন্মোক্ত ঘটনাবলীকে কোন কোন মোহাদ্দিস জাল বা বানোয়াট বলে উল্লেখ করলেও কেউ কেউ তা দুর্বল বা যয়ীফ হিসেবে গ্রহণ করেছেন। এ গুলো হলোঃ
১। এ দিনে আল্লাহ তায়ালা হজরত আদম (আঃ) এর তাওবা কবুল করেন।
২।এ দিনে নূহ (আঃ) এর নৌকা জুদী পর্বতের উপর থামে।
৩। এ দিনে ঈসা (আঃ) জন্ম গ্রহণ করেন।
উপরিল্লিখিত ঘটনা ছাড়াও সমাজে প্রচলিত আরো অনেক ঘটনাবলীর কথা জানা যায় ভবিষ্যতেও গুরুত্বপুর্ণ ঘটনা এ দিনে ঘটবে মর্মে যে সকল কথাবার্তা প্রচলিত রয়েছে যেমন-
এ দিনে আল্লাহ আসমান ও জমিন সৃষ্টি করেছেন। এ দিনে আল্লাহ তায়ালা দাউদ আঃ এর তাওবা কবুল করেছেন। এদিনে ইব্রাহীম (আঃ) নমরুদের অগ্নিকুন্ড থেকে রক্ষা পান। এদিনে ঈসমাঈল (আঃ) কে কুরবানী করা হয়। এ দিনে ইউনুছ (আঃ) মাছের পেট থেকে বাহির হন। এ দিনে ইউসুফ (আঃ) জেল খানা থেকে বের হন। এ দিনে ইয়াকুব (আঃ) দৃষ্টি ফিরে পান। এ দিনে ইয়াকুব (আঃ) ইউসুফ (আঃ)এর সাথে মিলিত হন। এ দিনে কেয়ামত সংগঠিত হবে। ইত্যাদি ঘটনাবলীর কথা সমাজে প্রচলিত রয়েছে যা কোরান ও সহিহ সুন্নাহ দ্বারা প্রমানিত নয়।এগুলি আসলে ইসরাঈলী রেওয়ায়াত বা ইহুদীদের কল্প কাহিনী মাত্র।
হযরত মূসা (আঃ) ও তাঁর সঙ্গীদের ফেরাউনের কবল থেকে মুক্তি ও ইরাকের কুফা নগরীর অদূরে ফোরাত নদীর তীরবর্তী কারবালা প্রান্তরে মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) এর দৌহিত্র হুসাইন বিন আলী (রাঃ) বিশ্বাস ঘাতক অত্যাচারী শাসক ইয়াজিদের সেনাবাহিনীর হাতে পরিবেষ্টিত হয়ে পরিবার পরিজন ও ৭২ জন সঙ্গী সহ নির্মম ভাবে শাহাদাত বরণের ঘটনাকে স্মরণ করে রাসুল (সাঃ) নির্দেশিত পথে সিয়াম পালনের মাধ্যমে দিবসটি পালন করতে হবে। ইহুদি প্রথা অনুযায়ী উৎসবের আয়োজন আবার কারবালার ঘটনাকে কেন্দ্র করে সিয়া প্রথা আনুযায়ী নিজ শরীর রক্তাক্ত করণ অতিরঞ্জিত বা বাড়াবাড়ী বৈকি?