পবিত্র জুমাতুল বিদা আজ

ইসলাম ডেস্ক- আজ শুক্রবার ২৫ রমজান। এটিই রমজানের শেষ জুমা। তাই এ দিনটি ‘জুমাতুল বিদা’ নামে আখ্যায়িত। আজকের দিনটির মর্যাদা ও তাৎপর্য অনেক।

সপ্তাহের অন্য দিনগুলোর তুলনায় জুমার দিনের বৈশিষ্ট্য, রমজানে তাতে মাত্রা বেড়ে যাওয়া এবং রমজানের শেষ প্রান্তের বৈশিষ্ট্য এ তিনের সমন্বয়ে এ দিনটির আলাদা মর্যাদা প্রমাণিত হয়। উম্মতে মুহাম্মদির জন্য সপ্তাহের প্রতিটি দিনেই ইবাদতের বিধান রয়েছে। জামাতের সাথে বা মসজিদে সমবেত হয়ে সম্মিলিত আকারে আল্লাহর ইবাদতে আত্মনিয়োগ করা মুসলমানদের কর্তব্য। তবুও সপ্তাহের একটি দিনে আরো বড় আকারে সম্মিলিত ইবাদত বা জুমার নামাজের বিধান মুসলিম উম্মাহের স্বাতস্ত্র্য ও বৈশিষ্ট্য যেমন বাড়িয়ে দেয়, তেমটি সামাজিক ও সামষ্টিক পর্যায়ে সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যরে পরিবেশ তৈরি করে।

মহানবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের বাণী অনুযায়ী প্রত্যেক নবীর উম্মতকে সপ্তাহের একটি দিন বেছে নিতে বলা হয়েছিল সামষ্টিক ইবাদতের জন্য। ইহুদিরা শনিবার ও খ্রিষ্টানরা রবিবারকে বেছে নেয়। কিন্তু মুসলমানরা বেছে নেয় শুক্রবারটিকে। আসলে এটিই আল্লাহ তায়ালার পছন্দ। সেটিই বেছে নেয়ায় এ উম্মতের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণিত হয়।

আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন শ্রেষ্ঠ দিন জুমার দিন। এ দিনে হজরত আদম আলায়হিস সাল্লামকে সৃষ্টি করা হয়েছিল। এ দিনে তাকে জান্নাতে বসবাস করতে দেয়া হয়েছিল। এদিনেই তাকে সেখান থেকে পৃথিবীতে নামিয়ে দেয়া হয়েছিল। আবার কেয়ামতও হবে জুমার দিনে। মোটকথা বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা

এ দিনের সাথে জড়িত। ‘আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের ধর্ম পরিপূর্ণ করে দিলাম। তোমাদের প্রতি আমার অনুগ্রহ পূর্ণাঙ্গ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের ধর্ম হিসেবে মনোনীত করলাম’- উম্মতে মুহাম্মদির শ্রেষ্ঠতের ঘোষণা সম্মলিত সূরা মায়েদার ৩ নম্বর আয়াতটি নাজিল হয়েছিল ৯ জিলহজ জুমার দিনে।

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাযিয়াল্লাহু আনহুকে এক ইহুদি পি ত বলেছিলেন- এমন একটি আয়াত যদি আমাদের ওপর নাজিল হতো তাহলে আমরা তা নাজিল হওয়ার দিনটিকে ঈদ হিসেবে পালন করতাম। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বললেন এটি আমাদের ওপর নাজিল হয়েছে আমাদের দু’টি ঈদের দিনে জুমা ও আরাফা। অর্থাৎ জুমার দিন এ উম্মতের জন্য সাপ্তাহিক ঈদের দিন।

মহানবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, জুমার দিনে এমন একটি মুহূর্ত আছে, যখন কোনো মুমিন বান্দা আল্লাহর কাছে যা চায়, তা-ই পায়। সেই মুহূর্তটি কখন আসে, তা নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়নি। লাইলাতুল কদর ও ইসমে আজমের মতো জুমার দিনের এই গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তও গোপন রাখা হয়েছে। তবে দু’টি সময়ের ব্যাপারে বেশি সম্ভাবনা রয়েছেÑ ইমাম যখন খুৎবা দেয়ার জন্য মিম্বরে ওঠেন, তখন থেকে জুমার নামাজ শেষ হওয়া পর্যন্ত এবং ওই দিন আসরের পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত।

মোট কথা সাধারণভাবে জুমার দিনের এসব গুরুত্ব মাহাত্ম্য রয়েছে। রমজানের কারণে এ মাহাত্ম্য অনেকগুণ বেড়ে যায়- যা বলার অপো রাখে না। আর রমজানের শেষভাগের প্রতিটি দিনই স্মরণ করিয়ে দেয় বহুগুণ ছওয়াব লাভের সুযোগ চলে যাচ্ছে বলে।

শেষ জুমার দিনটি যেন আরো জোরালে ভাষায় উদাত্ত কণ্ঠে ঘোষণা করে মুমিন বান্দাদের তওবা ইস্তেগফারে আত্মনিয়োগের মাধ্যমে জাহান্নাম থেকে মুক্তি নিশ্চিত করার জন্য। রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের অবারিত ধায়ায় সিক্ত হওয়ার সুবর্ণ সুযোগ যারা হাতছাড়া করে, তাদের জন্য দুঃখ করা ছাড়া কী থাকতে পারে?

তাই জুমাতুল বিদা সতর্ক বার্তা ঘোষণার দিন। আবার তা ঈদুল ফিতরের আগমনী বার্তা ঘোষণার দিন। সিয়াম সাধনার মাস সফলভাবে সম্পন্ন করার শেষ প্রান্তে উপনীত হওয়াও একটি শুভ আলামত।

তাই আল্লাহ তায়ালার অপার রহমত ও অনুগ্রহের অধিকারী হওয়ার এবং পাপরাশি থেকে পাক সাফ হয়ে ঈদের আনন্দ ভোগের সুসংবাদ ঘোষণা হতে থাকে রাব্বুল আলামিনের প থেকে। এমন গুরুত্বপূর্ণ দিনের মূল্যায়ন করা ও সদ্ব্যবহার করা রোজাদারদের জন্য অবশ্য কর্তব্য।

Facebook
Twitter
WhatsApp