একজন প্রকৃত মুসলিম হিসেবে ‘সত্যিকার অর্থে দায়িত্ব পালন করা’ যে মানুষটিকে বিনম্র সালাম জানাতে চায় অনলাইন আপডেট
অনলাইন আপডেট- প্রতিবেশি অন্যান্য দেশের তুলনায় আমাদের বাংলাদেশের মানুষ এমনিতেই আতিথীয়েতার জন্য একধাপ এগিয়ে সবসময়। এই অতিথীপরায়নতা আরও কয়েকধাপ এগিয়ে যায় পবিত্র রমজান মাসে । সিয়াম সাধনার এই পবিত্র মাসে অনেকেই যার যার সাধ্যমতো অন্যদের জন্য একদিন হলেও ইফতারের আয়োজন করে থাকেন।
এমন দৃশ্য দেখতেই অভ্যস্ত আমরা। কিন্তু এর বাইরেও যতসামান্য সাধ্যের মধ্যে যখন কোন মানুষের মধ্যে সেই আতিথীপরায়নতার ব্যপক ব্যাতিক্রমতা চোখে পড়ে তখন অবশ্যই সেটা আলোচনার বিষয় ।
রাজধানী ঢাকার একটি হোটেল গত ১০ বছর ধরে পুরো রমজান মাস জুড়ে বিনামূল্যে ইফতার করাচ্ছেন এক হোটেল মালিক । ফেসবুকে ওই হোটেলের ইফতারের একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওটি পোস্ট করার পর এখন পর্যন্তকয়েক লক্ষ বারের বেশি সেটি দেখা হয়েছে।
দেশের অন্যান্য জেলাশহরগুলোর তুলনায় ইট পাথরের নগর রাজধানী ঢাকায় মানুষে মানুষে আন্তরিকতার চিত্র বরাবরই আলাদা। নগরের নির্জীব ইটপাথরগুলোর মতই এখানকার অধিকাংশ মানুষ। তেস্টা মেটাতে একগ্লাস পানি যেখানে খেতে হয় দাম চুকিয়ে সেখানে একদিন নয় দুদিন নয় অথবা একবছর-দুবছরও নয় !
টানা দশবছর প্রতি মাহে রমজানের ৩০ দিন শত শত মানুষকে বিনে পয়সায় ইফতার করানোর মত মানুষ দেখলে চমকানোর কথাই। তবে সেই মানুষটা রাজধানীতে হাজারো কোটিপতিদের কেও একজন হলে হয়তো চমকানোর কোন ব্যাপারই থাকতোনা। কিন্তু চমকের জায়গাটা হলো আপাদমস্তক উদারমনা এই মানুষটির অর্থকড়ির সক্ষমতা সেই অর্থে নেই বললেই চলে! রাজধানীর জিঞ্জিরায় যেখানে ভেজাল মালামাল তৈরির আখড়া সেখানেই আজকের গল্পের সত্যিকার নায়ক রফিক ভাইয়ের ছোট্ট একটি হোটেলের অনেক বড় এক গল্প অনলাইন আপডেটের পাঠকদের জন্য ।
এই হোটেলের ব্যতিক্রমী সেবা আর পেছনের গল্প নিয়ে সম্প্রতি ফেসবুকে লিখেছেন । চলুন জেনে নেয়া যাক তার ভাষাতেই ।
ইফতারে ‘ভ্যাবাচ্যাকা’ খেলাম!
আমার এক বন্ধু তার বাসায় মেহমানদের জন্যে ইফতারের আয়োজন করবে বিধায় আমাকে নিয়ে গেলো হোটেল সোনারগাঁয়, সেখানে এক পিস ডিম-আলু বড়ার দাম ২০০ টাকা দেখে আমাদের তো চক্ষু ছানাবড়া! তাই সেখান থেকে আমরা একেবারে ছিটকে বেরিয়ে এলাম! বন্ধুর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আমি গ্রিন রোড, সেখানকার কাজ শেষ করতে করতেই ইফতারের সময় হয়ে গেলো। কোথাও বসে ইফতার করতে হবে হাতে সময়ও বেশি নেই তাই হাতের কাছের জিঞ্জিরা হোটেল ছিল ঢুকে গেলাম।
সবার সামনে সুন্দর ইফতারের প্লেট সাজানো, মুড়ি, ছোলা, জিলাপি, খেজুর, পেঁয়াজু, আলুর চপ, বেগুনী ইত্যাদি; আমার একার জন্যে যথেষ্ট! আমি দোকানের একজনকে বললাম এখানে বসে ইফতার করা যাবে, তিনি হাসিমুখে বললেন; বসেন। আমি অন্য সবার সাথে বসে গেলাম। একজনকে ডেকে বললাম ভাই একটা ঠাণ্ডা পানি দেন। উনি রেফ্রিজারেটর থেকে একটা ঠাণ্ডা পানি বের করে বললেন, পানির দাম টা দিয়ে দেন! আমি একটু অবাক হয়ে বললাম, একবারে দেই! তিনি বললেন না শুধু পানির দাম দেন, ইফতার তো ফ্র
আমি রীতিমত ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বসে থাকলাম কিছুক্ষণ! সম্বিৎ ফিরে পেয়ে সামনে বসা সবার দিকে একপলক নজর দিলাম! দেখলাম দোকানের বাইরেও টেবিল পেতে থরে থরে ইফতারের প্লেট সাজানো, একজন সাদা পাঞ্জাবি পরা সাদা সুশ্রুমণ্ডিত বৃদ্ধ লোক তার কর্মচারীদের বলছেন, ইফতার ফ্রী এইটা না বললে লোকজন বুঝব না! আমার ভ্যাবাচ্যাকা ভাব জারী থাকলো, সবার অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে আজান হলো!
আজকের ইফতার আমার কাছে অন্যরকম লাগছিল! নাথিং স্পেশাল, ওই তো ডাল আর পেঁয়াজ দিয়ে বানান পেঁয়াজু, কিন্তু কেন জানি মনে হল একটু বেশিই স্বাদ! পরিপূর্ণ তৃপ্তি সহকারে খেয়ে ক্যাশে যেয়ে বললাম ভাই প্রতিদিন কি ফ্রী ইফতারই দেন? তিনি উত্তরে বললেন প্রতিদিনই দেন এবং বিগত ১০ বছর যাবত এটা চলছে। শুধু তাই না, এই পুরো রমজান মাস জিঞ্জিরা হোটেলের সকল খাবারের বিকিকিনি বন্ধ থাকবে, ইফতার বানান ছাড়া কারিগরদের আর কোন কাজ নেই, ছুটি; পুরো রমজান মাস!
পরে জানতে পারলাম ক্যাশে বসা লোকটি এই দোকানের মালিক হাজী সালেহ আহমেদের ছেলে মোহাম্মাদ রফিকুল ইসলাম। রফিক ভাইয়ের হাতে জোড় করে ১০০ টাকা গুঁজে দিয়ে বললাম, আগামী দিনের ইফাতার বানাতে একটু হলেও কাজে লাগবে, তিনি হেসে গ্রহণ করলেন। আমি আবার পথে নামলাম, ততক্ষণে টিপ টিপ বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে!
Related: