মেহেদী হাসান গালিব, কন্ট্রিবিউটর, অনলাইন আপডেট
আমাদের দেহ প্রতি মিনিটে ত্বকের প্রায় চল্লিশ হাজার কোষ হারিয়ে থাকে। প্রতিটি কোষেই যুক্ত থাকে শরীরের একটি বিশেষ গন্ধ। এসব কোষ এতোই ক্ষুদ্র যে তা আমাদের পক্ষে কখনোই দেখা সম্ভব নয়। এসব কোষ বাতাসে উড়ে গিয়ে চলার পথে, আশেপাশের বিভিন্ন বস্তুতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে।
আমাদের মানুষের পক্ষে কোষগুলোর গন্ধ অনুভব করা সম্ভব না হলেও, ম্যান ট্রেলার কুকুররা তা অনায়াসেই অনুভব করতে পারে। কারণ স্বভাবগতভাবেই কুকুরের ঘ্রাণশক্তি মানুষের ঘ্রাণশক্তি অপেক্ষা দশ লক্ষ গুণ বেশি হয়ে থাকে।
ম্যান ট্রেলার হল এমন এক বিস্ময়কর কুকুরের জাত, যারা কিনা প্রায় ছয় ঘন্টা আগে রাস্তা দিয়ে চলে যাওয়া মানুষের খোঁজ করতে পারে। শুধু রাস্তাই নয়, পানি এমনকি ঝড়ের মত বিভিন্ন প্রতিকূল পরিবেশেও ম্যান ট্রেলার সমানভাবে দক্ষ। কেউ নিখোঁজ হলে কিংবা জঙ্গলে হারিয়ে গেলে অনুসন্ধানকারীরা যখন খুঁজতে গিয়ে বারবার ব্যর্থ হন, তখন তাদের শেষ আশা হিসেবে ম্যান ট্রেলার কাজে নামে। ম্যান ট্রেলার কুকুরদের সার্চ ডগ বা ট্রাকার ডগও বলা হয়ে থাকে।
ম্যান ট্রেলার কুকুরের প্রশিক্ষক ক্রিস্টিনে শ্যুলার বলেন, ‘পুলিশ যখন আমাদের ডাকে, তখন তার অর্থ, কোনো মানুষের জীবন বিপন্ন, কোনো মানুষ নিখোঁজ হয়েছে৷ আমরা হলাম সেই নিখোঁজ মানুষটিকে খুঁজে পাবার, পলাতক অপরাধীকে খুঁজে বের করার শেষ পন্থা৷’
ম্যান ট্রেলার গন্ধ শুঁকে শুঁকে চলে এবং কোন ব্যক্তির শরীরের সেই নির্দিষ্ট গন্ধ অনুযায়ী পথ নির্বাচন করে। এক্ষেত্রে ম্যান ট্রেলারকে আগে নিখোঁজ ব্যক্তির শার্ট কিংবা ব্যবহৃত কাপড়ের গন্ধ শুঁকতে দেওয়া হয়। ম্যান ট্রেলার তা ভালো করে শুঁকে গন্ধটা স্মৃতিতে ধরে রাখে এবং নিখোঁজ ব্যক্তিটির ব্যবহৃত পথ অনুসরণ করে ব্যক্তিটির খোঁজ দিতে পারে।
শুধু তাই নয়, ছয় ঘন্টা আগে যদি কোন রাস্তা দিয়ে একজন ব্যক্তি যেয়ে থাকেন, ম্যান ট্রেলার সেই ব্যক্তির খোঁজ পর্যন্ত নির্ভুলভাবে দিতে সক্ষম। ম্যান ট্রেলারের এই নিখোঁজ অভিযানে ডগ হ্যান্ডলারও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকেন। তাকে সবসময় লক্ষ্য রাখতে হয় ম্যান ট্রেলারের মনোযোগ যেনো অন্য কোন কিছুর দ্বারা বিক্ষিপ্ত না হয়। মানুষ কিংবা অন্য কোন কুকুর দেখে ম্যান ট্রেলার তার মনোযোগ হারিয়ে ফেললেই কাজে ব্যর্থ হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়।
ম্যান ট্রেলার কুকুরের এই বিশেষ দক্ষতার পেছনে যে বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, তা হল এর প্রশিক্ষণ। জন্মের পর থেকেই এদের প্রশিক্ষণ শুরু হয়ে যায়। ম্যান ট্রেলার কুকুরের প্রশিক্ষণ অনেক সময়সাপেক্ষ একটি বিষয়। প্রশিক্ষণের আগে কিছু প্রস্তুতিমূলক কাজ সম্পন্ন করে নিতে হয়। এই যেমন কুকুরকে নিয়ে হাঁটতে যাওয়া, তাকে পরিবেশ চেনানো, মানুষদের সাথে তার ব্যবহার পর্যবেক্ষণ করা ইত্যাদি। এসব প্রস্তুতিমূলক কাজের পর শুরু হয় ম্যান ট্রেলারের মূল প্রশিক্ষণ।
ম্যান ট্রেলার হিসেবে একটি কুকুরকে সরকারি সার্টিফিকেট পাবার জন্য অত্যন্ত কঠিন একটি পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। কয়েক ঘন্টা আগে নিখোঁজ হওয়া কোন ব্যক্তির গন্ধ অন্য মানুষদের চলাফেরায় ঢাকা পড়ে গেছে। বন্দর এলাকায় বাতাস কিংবা জলের ঝাপটায় সেই গন্ধ মুছে যাওয়াও অস্বাভাবিক কিছু নয়। এতোসব প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে যেয়ে ম্যান ট্রেলারকে সেই নিখোঁজ ব্যক্তিটির খোঁজ দিতে হবে। তবেই সে হয়ে উঠবে সরকারি সার্টিফিকেটধারী ম্যান ট্রেলার।
একটি ম্যান ট্রেলার যখন কাউকে খুঁজতে শুরু করে, তখন ডগ হ্যান্ডলারের ম্যান ট্রেলারকে অনুসরণ করা ছাড়া আর কিছুই করার থাকে না। পুরো বিষয়টি ম্যান ট্রেলার নিজ দায়িত্বে সম্পন্ন করে এবং নির্ভুলভাবে ও খুব অল্প সময়ে নিখোঁজ ব্যক্তিটির সন্ধান এনে দেয়।