মাদাগাস্কারের টপ সিক্রেট ভিলায় রেডিয়েটেড কচ্ছপ..!


চিত্র বিচিত্র ডেস্কঃ

মাদাগাস্কারের রাজধানী আন্তানারিভোরর ঠিক বাইরেই একটি ভিলা চোখে পড়ে। সেখানে কি ঘটে চলেছে তা কেউ জানে না। ভিলার চারদিকে কাঁটাতারের বেড়া। সেখানে রাতে পাহাড়া দেয় কুকুর।

ওই ভিলায় কর্মরতরা কারো সঙ্গেই খুব বেশি কথা বলেন না। এই স্থানের বিষয় কাউকে কোনো তথ্য দেবে না বলেও প্রতিজ্ঞাবব্ধ তারা।

এমন রহস্যের মূল কারণ হলো, ভিলাটি টার্টল সার্ভাইভাল অ্যালায়েন্সের (টিএসএ) সদরদপ্তর। এখানে রয়েছে ৫০০টিরও বেশি কচ্ছপ যাদের বলা হয় ‘রেডিয়েটেড টার্টল’। এদের সংরক্ষণ করা প্রয়োজন। কারণ এদের মূল্য অনেক।

মাদাগাস্কার থেকে এগুলো কালোবাজারির হাত ধরে বাইরে চলে যাচ্ছিল। পরে কর্তৃপক্ষ এদের ধরে টিএসএ-এর কাছে হস্তান্তর করে। আন্তর্জাতিক কালোবাজারে প্রতিটি কচ্ছপ ৮০০ ডলারে বিক্রি হতো। এই কচ্ছপগুলোর খোলস অদ্ভুত বৈশিষ্ট্যের। রেডিয়েটেড বলতে এদের খোসলে কালো ও হলুদ রংয়ের তারকা চিহ্নের মতো ছোপ ছোপ দাগ রয়েছে।

এদের সম্পর্কে কিছু তথ্য তুলে ধরা হলো।

১. এগুলো পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর কচ্ছপগুলোর অন্যতম।

২. বংশবিস্তারের কার্যক্রম সাংঘর্ষিক হতে পারে। স্ত্রী প্রজাতির সঙ্গে মিলিত হতে পুরুষদের প্রতিদ্বন্দ্বী থাকে।

৩. যুদ্ধের পর স্ত্রীর সঙ্গে মিলিত হতে পারে বিজয়ী পুরুষ।

৪. মাদাগাস্কারের চরমভাবাপন্ন সাউদার্ন ড্রাই থর্ন এবং ট্রপিক্যাল বনাঞ্চলে এদের দেখা যায়।

৫. বাসস্থানের অভাব ও চোরাকারবারীদে অত্যাচারে বিলুপ্তির পথে।

২০১৫ সালে এমন কচ্ছপ জব্দ হয় প্রায় ৩ হাজারের মতো। টিএসএ-এর জন্য খুশির খবর যে এগুলো ধরা গেছে। বেসরকারি এই প্রতিষ্ঠানই তাদের দেখভাল করছে।

টিএসএ’র মাদাগাস্কার কোঅর্ডিনেটর হেরিলালা র‌্যান্দ্রিয়ামাহাজো জানান, আমরা কেবল এদের টিকিয়ে রাখতে চাইছি। তারা যেন তাদের প্রাকৃতিক আবাসস্থলে থাকতে পারে তার ব্যবস্থা করা হবে। এই প্রতিষ্ঠানটি কচ্ছপ উদ্ধারের ব্যবস্থাও করবে।

এতগুলো কচ্ছপকে দেখে রাখার জন্যে অর্থসহ নানা ধরনের ব্যবস্থা গ্রহনের প্রয়োজন। এরা অসুস্থ হয়ে গেলে চিকিৎসব্যবস্থা গ্রহণ খুব কঠিন। পোচাররা এদের ধরার পর বেশ কয়েকদিন খাবার ও পানি ছাড়া প্যাকেটে বন্দি থাকে। তখন এরা মৃত্যুর কাছাকাছি চলে যায়। তখন তাদের উষ্ণতা ও অ্যান্টিবায়োটিক দিতে হয়। এরা অনেক খায়। কাজেই সঠিক খাদ্য নিয়মিত সরবরাহ বেশ ব্যয়বহুল। এমনকি বাজারেও এদের যথেষ্ট খাবার মেলে না।

কচ্ছপগুলোর এমন যত্ন অল্প কয়েক দিনের জন্য নয়। আগামী অন্তত ৫ বছর এদের দেখে রাখতে হবে। ছোট বয়সে এদের খোলস বেশ নরম থাকে। তখন বুনো কুকুর এদের খেয়ে ফেলে। যে কচ্ছপগুলো তত্ত্বাবধানে রয়েছে তারা যথেষ্ট বড় না হওয়া পর্যন্ত ছেড়ে দেওয়া যাচ্ছে না।

র‌্যান্দ্রিয়ামাহাজো জানান, এদের ছেড়ে দিলেই চিন্তামুক্ত হওয়া যায় না। কারণ এদের দেখভালে নিযুক্তদের কিছু কর্মকর্তা পাচারের সঙ্গে জড়িত। এদের উদ্ধার করা গেছে। কিন্তু আরো অনেক কচ্ছপ কোনো চেকিং চাড়াই বিমানে উঠে যায়। সাধারণত চোরাকারবারীর ব্যক্তিগত ব্যাগ-লাগেজে নেওয়া হয় এদের।

মাদাগাস্কারে কচ্ছপ রক্ষায় কর্মরত ফ্রেঞ্চ বিশেষজ্ঞ মিগুয়েল পেড্রোনো জানান, এদের রক্ষায় যে অর্থ ব্যয় করা হয় সে অর্থ এদের পাচাররোধে ব্যয় করলে বরং সমস্যার সমাধান হবে। এদের পাচার বন্ধ হলেও তো এরা এখানে টিকেই যাবে। তবে যদি তা না করা যায়, তবে এদের চিড়িয়াখানায় দিয়ে দিলে অনেকটা নিরাপত্তা মিলবে। কিংবা এমন কোনো স্থানে ছেড়ে আসা যায় যেখানে রেডিয়েটেড কচ্ছপ নেই।

বর্তমানে টিএসএ এমন স্থানেই উদ্ধারকৃত কচ্ছপদের ছাড়ে যেখানে অন্যান্য কচ্ছপের বাস। এখন এদের জন্য আর খুব বেশি কিছু করার নেই টিএসএ’র। নিজেদের সাধ্যমত দেখাশোনা করা হচ্ছে কেবল, জানান র‌্যান্দ্রিয়ামাহাজো।

Facebook
Twitter
WhatsApp