জেফরি ডামারঃ এক নরখাদকের গল্প (শিউরে উঠবেন আপনিও)!

ইসতিয়াক আহমেদ, লাইফস্টাইল কন্ট্রিবিউটার লেখক, অনলাইন আপডেট। ২১ মে, ১৯৬০ সালে জন্ম নেয়া এই কুখ্যাত সিরিয়াল কিলার পরিচিত ছিলেন “মিলওয়াকি ক্যানিবাল”  নামে। তাকে আমেরিকার ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়ংকর এবং কুখ্যাত সিরিয়াল কিলার বলা হয়। তার ভিক্টিমের  সংখ্যা ছিল ১৭ জন।

জেফরি ডামারের বাবা ছিলেন মারকুইটি ইউনিভার্সিটির রসায়নের ছাত্র। তার মা ছিলেন একজন টেলিটাইপ মেশিন ইন্সট্রাকটর। ছোটবেলাটা মোটেই সুখকর ছিল না জেফরি ডামারের। তার মা ছিলেন প্রচন্ড লোভী এবং হিংসুটে ধরণের মানুষ। ডামারের বাবা পড়াশোনার কাজে বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকতেন। এর ফলে ডামারের মা বেশ কয়েকজনের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলেন। ডামারের প্রতি তার বাবা মা কারোরই অতটা খেয়াল ছিল না। যার কারণে তার মানসিক বিকাশ সসঠিকভাবে হয়নি।

জেফরি ডামারের হিঙ্গস্র মনোভাব তার স্কুলজীবনেই প্রকাশ পায়। তার সহপাঠীরা প্রায়ই তার আচরণ নিয়ে অভিযোগ করত। হাইস্কুলে পড়াকালীন সময়েই বিভিন্ন ধরণের মাদকে আসক্ত হয়ে পড়ে জেফরি ডামার। এমনকি স্কুলে একবার তার ব্যাগ থেকে এলকোহলের বোতল পাওয়া গেলে সে জানিয়েছিল এটা ওষুধের বোতল।

১৯৭৮ সালে তার গ্রাজুয়েশন শেষ হয়। ওই সময়ই তার বাবা মায়ের বিচ্ছেদ ঘটে। জেফরি ডামারের ছোটভাইকে নিয়ে তার মা চলে যান। তার বাবাও লাদা একটা শহরে বাসা ভাড়া করে থাকতে শুরু করেন। ফলে জেফরি ডামার বাসায় একা থাকতে শুরু করেন। এই সুযোগে একদিন ফাকা বাসায় স্টিভেন মার্ক হিক নামের এক ছেলেকে নিয়ে আসে। বাসায় বসে তারা একসাথে মদ খায়। তারপর স্টিভেনের নেশা হয়ে এলে তাকে ডাম্বেল দিয়ে আঘাত করে খুন করে জেফরি। নেশার ঘোরে বাধা দেয়ার সুযোগ পর্যন্ত পায়নি স্টিভেন। এরপর জেফরি ডামার স্টিভেনের মৃতদেহের উপর হস্তমৈথুন করে। এরপর ছুরি দিয়ে তার শরীর ক্ষতবিক্ষত করে।

এরপর থেকেই জেফরি ক্রমশ আরো মাদকাসক্ত এবং হিঙ্গস্র হয়ে উঠতে থাকে। ১৯৮১ সালে জেফরিকে তার দাদীর কাছে পাঠিয়ে দেয়া হয় যাতে তার মাদকাসক্তি কিছুটা কমে। কিন্ত তাতেও কোন কাজ হয়নি।

এরপর জানুয়ারি ১৯৭৯ সালে জেফরি ইউএস সেনাবাহিনীতে যোগদান করে। কিন্ত শৃঙ্খলাভঙ্গসহ নানা কারণে তাকে বরখাস্ত করা হয়।

তার প্রথম জেলে যাওয়ার অভিজ্ঞতা হয় ১৯৮৬ সালে। ১২ বছর বয়সী এক বালককে যৌন হয়রানি করার অভিযোগে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। কিছুদিন পর জরিমানা নিয়ে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। এরপর সে আরো ভংকর হয়ে ওঠে।

১৯৮৭ সালের নভেম্বরে জেফরি স্টিভেন তোওমি নামে এক ব্যাক্তিকে খুন করে তার রক্ত পান করে জেফরি। পরব্ররতীকে জেফরি জানায়, তোওমিকে খুন করার কোন ইচ্ছাই ছিল না তার। নেশার ঘোরে সে এটি করে ফেলেছিল।

এর কিছুদিন পরই সে জেমস ডেক্সটার নামে একজন পুরুষ দেহব্যবসায়ীকে খুন করে। এই খুনগুলোর একমাত্র কারণ ছিল যৌন আনন্দ পাওয়া। কিশোর এবং তরুণদের খুন করে তার মৃতদেহের সাথে সঙ্গম করে সে যৌন আনন্দ পেত।

এর মাঝখানে তাকে বেশ কয়েকবার জেলে যেতে হয় যৌন হয়রানির অভিযোগে। কিন্ত কখনোই তার খুনগুলো নিয়ে কেউ সন্দেহ করেনি।

১৯৯১ সাল তার জীবনের সবচেয়ে নৃসংস বছর। এ বছরই সে ১৪ টা খুন করে (উইকিপিডিয়া মতে)। প্রতিটি খুনের পরই সে মৃতদেহের সাথে সঙ্গম করত এবং রক্ত মাংস ভক্ষ্ণ করত। লক্ষনীয় বিষয় যে, তার খুনের শিকার সকলেই পুরুষ ছিলেন এবং তাদের প্রত্যেকেই বয়সে তরুণ ছিলেন। অর্থাৎ কমবয়সী পুরুষ এবং কিশোরদের প্রতি তার যৌনাকর্ষণ ছিল।

১৯৯১ সালের জুলাইয়ের ২২ তারিখ ট্রেসি এডওয়ার্ড নামে একজনকে হত্যা করার জন্যে বাসায় নিয়ে আসে জেফরি ডামার। তাকে খুন করার আগে হ্যান্ডকাফ পরানোর চেষ্টা করছিল ডামার। কিন্ত সেসময় ডামারের সাথে মারামারি করে  ট্রেসি পালিয়ে যায় । দৌড়ে পালানোর সময় তার এক হাতে হ্যান্ডকাফ ঝুলছিল। সোজা সে পুলিশ স্টেশনে এসে রিপোর্ট করে। ওইদিনই জেফরি ডামারকে গ্রেপ্তার করা হয়।

পরব্ররতীতে বিচারে, ১৫ জনকে হত্যার দায়ে তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। শাস্তি হিসেবেতাকে  ৯৩৭ বছরের কারাদন্ড দেয়া। পরবর্তীতে নিজের মৃত্যুদণ্ড প্রার্থনা করে বিচারকের কাছে আবেদন জানালেও তা নাকচ করে দেয়া হয়।

১৯৯৪ সালের ২৮শে নভেম্বর কারাগারে ক্রিস্টোফার স্কেভার একজন কয়েদির আঘাতে নিহত হন জেফরি ডামার।

তথ্যসূত্রঃ উইকিপিডিয়া

Facebook
Twitter
WhatsApp