অভিশপ্ত ছবিঃ ক্রন্দনরত ছেলেটি (The Crying Boy)

ইসতিয়াক আহমেদ, লাইফস্টাইল কন্ট্রিবিউটার, অনলাইন আপডেট। ঘটনাটা ১৯৮৮ সালের। ইংল্যান্ডের হ্যাসোয়েলে আমোস পরিবারের বহু পুরাতন বাড়িতে আগুন লেগে যায়। যথারীতি অগিকান্ডের পর ফায়ার সার্ভিস এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। কিন্ত ততক্ষণে বাড়ির প্রায় পুরোটাই ধ্বংস হয়ে গেছে। বাড়ির ধংসস্তুপ থেকে উদ্ধার করা অনেকগুলি জিনিসের মধ্যে ক্রন্দনরত একটা বাচ্চার ছবি ছিল। যে ছবিটা পরবর্তীতে “The crying boy” নামে পরিচিতি পায়।
এরপরের বছর ব্রয়াডফোর্ডে এক অগ্নিকান্ডের পর ধ্বংসস্তূপ থেকে আবারো একই ক্রন্দনরত ছেলের ছবি পাওয়া যায়। ঘটনা এখানেই থেমে থাকেনি গোটা ইংল্যান্ডের বেশ কয়েকটা অগিকান্ডের পর ওই একই ছবি ধংসস্তূপ থেকে পাওয়া যায়। ইয়র্কশয়রের দমকল বিভাগ এবার ছবিটির ব্যাপারে তদন্তে নামে।

সাধারণ জলরঙে আঁকা ছবি। একটা ক্রন্দনরত বাচ্চার বিষন্ন চোখ। আর পাচটা সাধারণ চিত্রকর্মের মতই ছবিতে কোন অস্বাভাবিকতা নেই। তাহলে? সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো,  এই ছবিটির ব্যাপারে তেমন কোন তথ্য পাওয়া যাচ্ছিল না। এমনকি এই অভিশপ্ত ছবির ছেলেটির পরিচয় কিংবা ছবিটি কে এঁকেছিলেন, সেই ব্যপারেও কোন কিছু জানা যাচ্ছিলো না।

অবশেষে ১৯৯৫ সালে ডেভন শহরের একজন স্কুলশিক্ষক জর্জ ম্যালোরি দাবি করেন তিনি অবশেষে ছবিটি সম্পর্কে জানেন। তিনি জানান,  একজন বৃদ্ধ স্প্যানিশ পোস্ট কার্ড শিল্পী  ফ্র্যাঙ্কট সেভিল এই ছবিটি এঁকেছিলেন। সেভিল থাকতেন মাদ্রিদে। ১৯৬৯ সালের দিকে সেভিল এক বিষন্ন ছেলেকে মাদ্রিদের রাস্তায় ঘুরে বেড়াতে দেখেন।

ছবি আকানোর জন্য ছেলেটিকে তার খুব মনে ধরেছিল। ছেলেটি খুব বেশি কথা বলত না কারো সাথে। ছবি আকানোর জন্য সেভিল ছেলেটির সাথে সখ্যতা গড়ে তোলেন। কিছুদিনের মধ্যেই সেভিল এই ছেলেটির ছবি একে ফেলেন। এরই মধ্যে সেভিল ছেলেটাকে বেশ আপন করে ফেলেন। তাই ছেলেটিকে নিজের কাছেই রেখে দেন। নাম বা পরিচয় কোন কিছুই ঠিকভাবে বলতে পারত না ছেলেটি।

এরই মধ্যে, এক পাদ্রী ছেলেটিকে চিনতে পারেন। তিনি জানান, এই ছেলেটির নাম ডন বনিলো। যখন সে ছোট ছিল তখন ওর বাবা-মা’কে এক অগ্নিকান্ডে মারা্ যায়। আগুনে ছেলেটির বাড়িটাও পুড়ে ছাই হয়ে যায়। ছেলেটার ঠাই হয় রাস্তায়। এক পর্যায়ে সে মাদ্রিদে এসে ভিক্ষা করতে শুরু করে। পাদ্রীটি সেভিলকে সাবধান করেন,  ছেলেটিকে এক জায়গায় বেশিদিন যেন থাকতে না দেয়া হয়। কারণ যেখানেই সে কিছুদিন অবস্থান করে সেখানে রহস্যময়ভাবে আগুন লেগে যায়। এই কারণে গ্রামবাসীরা ছেলেটিকে “Diablo” কিংবা পিশাচ বলে ডাকতো।

সেভিল এসব কুসংস্কারে কান না দিয়ে ছেলেটার ভরণ পোষণের দায়িত্ব নিলেন। এর মধ্যে তার “The crying boy” ছবিটি বিক্রিও হয় বেশ ভাল মূল্যে। কিন্ত এর কিছুদিন পরেই সিভিলের বাড়িতে আগুন লেগে যায়। আগুনে তার বাড়ি আর তার ছবি আকার স্টুডিও ধ্বংস হয়ে যায়। সেভিল নিঃস্ব হয়ে যান।

অদ্ভুতভাবে, অগ্নিকান্ডের পর থেকে ছেলেটাকে আর খুজে পাওয়া যায়নি। তবে সন্দেহ করা হয় ১৯৭৬ সালে বার্সেলোনাতে এক গাড়ি দুর্ঘটনায় ছেলেটি মারা যায়। গাড়ি দুর্ঘটনায় চালকের দেহ এতোটাই পুড়ে গিয়েছিল যে তার চেহারা শনাক্ত করা যাচ্ছিলো না। গাড়ি থেকে পরে ড্রাইভিং লাইসেন্সের কিছু অংশ অক্ষত অবস্থায় পাওয়া যায়। লাইসেন্সে দেখা যায় চালকের নাম ডন বানিলো। তবে এটা কি সেই ছেলেই কিনা নিশ্চিতভাবে জানা যায় না।

এর কয়েক বছর পর ইংল্যান্ডে ঘটা অগ্নিকান্ডের সাথে ছবিটির সম্পর্ক অমীমাংসীতই রয়ে গেছে।

Facebook
Twitter
WhatsApp