বগুড়া : প্রকল্প বরাদ্দের জন্য টাকা নিয়ে সময় মতো দিতে না পারায় যুবলীগ নেতাদের হাতে লাঞ্ছিত হয়েছেন বগুড়া ৭ আসনের সংসদ সদস্য (শাজাহানপুর ও গাবতলী উপজেলা) শওকত আলী গোলবাগী বাবলু ওরফে রেজাউল করিম বাবলু।
এ সময় সংসদ সদস্য উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেন ছান্নুকে পিস্তল উঁচিয়ে গুলি করার চেষ্টা করেন বলেও অভিযোগ উঠেছে ।
আজ বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শাজাহানপুর উপজেলা পরিষদে আইন শৃঙ্খলা বিষয়ক বৈঠক চলার সময় এই ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় সংসদ সদস্যের ব্যক্তিগত সহকারী (পিএস) আহত হয়েছেন। অন্যদিকে সংসদ সদস্যর লোকজনের হাতে উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) বাদশা আলমগীর আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
এই ঘটনায় সংসদ সদস্যর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে তাৎক্ষণিকভাবে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে উপজেলা আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। উপজেলা পরিষদ থেকে শুরু হয়ে মিছিলটি মাঝিড়া বন্দরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে মাঝিড়া বাস স্ট্যান্ডে সমাবেশ করে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তালেবুল ইসলাম তালেব, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফরিদুল ইসলাম মুক্তা, সাংগঠনিক সম্পাদক নাসির উদ্দিন বাবলুসহ প্রমুখ।
উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) বাদশা আলমগীর বলেন, ‘শওকত আলী গোলবাগী বাবলু ওরফে রেজাউল করিম বাবলু সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর আমার কাছ থেকে ৩ লাখ ৯৫ হাজার টাকা নেন। সাজাপুর পূর্ব দক্ষিণ পাড়া ঈদ গাঁ মাঠ সংস্কারের জন্য টিআর কাবিখা প্রকল্পের বরাদ্দ পেতে আমি এই টাকা ঘুষ দিয়েছিলাম।’
বাদশা আলমগীর আরও বলেন, ‘৩ লাখ টাকা এবং কিছু বরাদ্দ সংসদ সদস্য দিয়েছেন কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে ৯৫ হাজার টাকা অথবা প্রকল্প কিছুই দিচ্ছিলেন না। বুধবার উপজেলা পরিষদে আইন শৃঙ্খলা বৈঠকে সংসদ সদস্য আসবে জেনে তাঁর সঙ্গে কথা বলার জন্য অপেক্ষা করি। বেলা সোয়া ১১টার দিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অফিসের সামনে আমি সংসদ সদস্যের কাছে টাকার সমাধান কী হলো তা জানতে চাই।
এ সময় সংসদ সদস্যর শ্যালক এবং পিএস এর দায়িত্বে থাকা রেজাউল করিশ আমার উপড়ে চড়াও হন। এ সময় সংসদ সদস্যর আরেক শ্যালক এবং প্রতিনিধির দায়িত্বে থাকা উপজেলা যুবলীগের সহসভাপতি নজরুল ইসলাম আমাকে ঝাপটে ধরেন আর পিএস রেজাউল করিম ময়লা পরিষ্কার করার স্টিলের স্টিক দিয়ে আমাকে মারতে থাকেন।’
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য সোহরাব হোসেন ছান্নু বলেন, ‘আমি আইনশৃঙ্খলা বৈঠকে ছিলাম। বাইরে হট্টগোলের শব্দ শুনে বের হয়ে আসি এবং সংসদ সদস্যকে বুঝিয়ে সরে যেতে বলি। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে সংসদ সদস্য পিস্তল বের করে প্রকাশ্যে আমার পায়ের দিকে তাক করেন। আমি লজ্জা এবং ভয়ে আবারও বৈঠকের সভা কক্ষে চলে যাই।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে এমপি শওকত আলী গোলবাগী বাবলু প্রথমে অস্ত্রের বিষয়টি অস্বীকার করেন। পরবর্তীতে এমপি বলেন, ‘ঘটনার সময় তারা (চেয়ারম্যানের লোকজন) মারামারি করে এবং পুলিশ তাদের বারণ করে থামাতে পারছিল না। যখন উপজেলা চেয়ারম্যান আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় এবং আমার ব্যক্তিগত সহকারীসহ অন্যান্যদের মেরে আহত করে আমার দিকে ধাওয়া করে, তখন আত্মরক্ষার জন্য আমি আমার বৈধ অস্ত্রটি বের করি।’
এমপি আরও বলেন, ‘যখন আমি দেখলাম তারা হাতে রট-ফট নিয়ে আমাকে আহত করতে পারে, আমাকে মেরে ফেলতে পারে, তখন ওটা (পিস্তল) হাতে নিয়েছি। ওটা আমার কোমরেই থাকে। বাইরে গেলে ওটা আমার সঙ্গে থাকে।’
জানতে চাইলে শাজাহানপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আরিফুল ইসলাম জানান, উপজেলা পরিষদের ঘটনায় এখন পর্যন্ত থানায় কেউ অভিযোগ দেননি। পরিবেশ শান্ত আছে।