প্রেগানেন্সি কিট আবিষ্কারের পুর্বে যেভাবে নারী নিশ্চিত হতেন গর্ভবতী কিনা!
নিশীতা মিতু, লাইফস্টাইল ফিচার এডিটর, সময়ের কণ্ঠস্বর।
বর্তমান সময়ে নারীদের গর্ভাবস্থার পরীক্ষা করা এখন খুব সহজ একটি কাজ। বাসার কাছে ফার্মেসি থেকে প্রেগানেন্সি কিট কিনে এনে সহজেই করতে পারেন পরীক্ষা। কিন্তু সেই সময়টার কথা ভাবুন তো যখন এই কিট আবিষ্কার হয়নি। তখন কিভাবে পরীক্ষা করা হত? কিভাবে একজন নারী বুঝতে পারতেন তিনি গর্ভবতী কিনা?
চিকিৎসকগণ প্রায় ৬০০০ বছর মানুষের প্রসাব বা মূত্রের জৈবিক প্রক্রিয়া নিয়ে সূক্ষ্মদৃষ্টিসম্পন্ন গবেষণা করেছেন। ধারনা করা হয়, মিশরের চিকিৎসকগণ সর্বপ্রথম মূত্র পরীক্ষার মাধ্যমে গর্ভাবস্থা শনাক্ত করার পদ্ধতি আবিষ্কার করেন।
শুরুর দিকের কথা
প্রাচীন মিশরে গর্ভাবস্থা পরীক্ষা করার এক অদ্ভুত নিয়ম প্রচলন ছিলো। যদি কোন নারীর সময়মত মাসিক ঋতুস্রাব না হত তাহলে ধারনা করা হত সে গর্ভবতী। এটি নিশ্চিত হওয়ার জন্য তাকে এলকোহল ও খেজুর খাওয়ানো হত, যতক্ষণ না সে বমি করত। যদি সে নারী খুব দ্রুত বার বার বমি করত তাহলে ধারনা করা হত সে গর্ভবতী। এই কষ্টকর পরীক্ষা পদ্ধতি অবশ্য বেশিদিন টেকেনি। এরপরই আসে মূত্র পরীক্ষার মাধ্যমে গর্ভাবস্থা নির্নয়ের পদ্ধতি।
গম-বার্লি পদ্ধতি
আগের পদ্ধতির তুলনায় বেশ কম কষ্টের ছিলো এই পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে নারী গম-বার্লির একটি গাদার উপর মূত্র ত্যাগ করত। যদি মূত্রে থাকা ইস্ট্রোজেনের মাত্রা বৃদ্ধির ফলে বীজ অঙ্কুরিত হতো তার মানে সে নারী সন্তানসম্ভবা।
এ পদ্ধতি বেশ অনেক বছর চলেছিলো।
অন্য এক ইতিহাস
১৮৯০ সালের শেষের দিকে বিজ্ঞানীরা হরমোনের অস্তিত্ব আবিষ্কার করেন। ১৯২০ সালে তারা মানবদেহে একটি নির্দিষ্ট হরমোন খুঁজে পান যার নাম human Chorionic Gonadotropin (hCG)। এই হরমোন সাধারণত শুধুমাত্র গর্ভবতী নারীদের মূত্রে পাওয়া যায়। ভ্রুণ দেহ গঠনে এ হরমোন বড় ধরনের ভুমিকা পালন করে।
জার্মানি রসায়নবিদ Selmar Aschheim এবং স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ Bernhand Zondek মিলে hCG পরীক্ষার একটি পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। তারা একজন গর্ভবতী নারীর মূত্র একটি স্ত্রী ইঁদুরের দেহে প্রবেশ করিয়ে দেখেন কয়েকদিনের মাঝে ইঁদুরের ডিম্বাশয় বৃদ্ধি পেয়েছে। তারা তাদের নাম অনুসারে এই পরীক্ষার নাম দেন A-Z টেস্ট।
আরো কিছু অজানা কথা
১৯৩০ সালে, বিজ্ঞানীরা এই A-Z টেস্ট ব্যাঙ ও খোরগোশ এর উপর ও করেন। বিজ্ঞানী Dr. Maurice Fredman, ইউনিভার্সিটি অফ পেনসিলভিয়া ম্যাডিকেল স্কুলে গবেষণা করে আবিষ্কার করেন যে একজন নারী সন্তান সম্ভবা নাকি নয় তা নিশ্চিত হওয়া যেতে পারে একটি স্ত্রী খরগোশের দেহে সেই নারীর মুত্র প্রবেশ করানোর মাধ্যমে। জযদি খরগোশের দেহে মুত্র প্রবেশ করানোর কিছুদিনের মাঝে তার ডিম্বাশয় বৃদ্ধি পায় তবে সেই নারী গর্ভবতী। আর না হলে নয়।
শেষ কথা
সে সময়ে খরগোশ হত্যা পাপ থাকলেও ডিম্বাশয় পরীক্ষা করার জন্য দ্রুততম উপায় ছিলো প্রাণী ব্যাবচ্ছেদ। রোগীর জন্য ইতিবাচক হলেও খরগোশের জন্য তা ছিলো নেতিবাচক। ভাগ্যিস ১৯৬০ সালে গর্ভাবস্থা পরীক্ষার নতুন নিয়ম আবিষ্কার হয়েছিলো না হয় কত খরগোশকেই এভাবে অকারণে জীবন দিতে হত ভাবুন তো একবার! আধুনিক বিশ্বে গর্ভাবস্থা পরীক্ষার জন্য প্রেগনেন্সি কিট ব্যবহার করা হলেও মিশরের বেশ কিছু এলাকায় এখন ও সেই গম-বার্লি পদ্ধতি চালু রয়েছে।
তথ্যসূত্রঃ how staff works, amazon.com, Armstrong.