(নিউজ ডেস্ক) সময়ের কন্ঠসর ঃ পাচ ভাইকে বিয়ে করে এক পুত্র জন্ম দিয়ে এই তরুণী যেন আধুনিক দ্রৌপদী। “পাঁচভাই এর এক স্ত্রী” হয়ে ঈর্ষা ও হিংসার অনেক উপরে ভালবাসার গুরুত্ত ও ভাইদের সম্পর্ক অটুট রেখেছেন বলে মন্তব্য করেছেন এই তরুণী ।
উত্তরাখণ্ডের দেরাদুন নিবাসী ২১ বছরের রাজো বর্মা মহাভারতের দ্রৌপদীর মতোই বিয়ে করেছেন পাঁচ পুরুষকে।রাজো সিদ্ধান্ত নেন, তিনি গুড্ডুর অন্য ভাইদেরও বিয়ে করবেন পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে সম্পর্ক অক্ষুণ্ণ রাখার জন্য একে একে পাচ ভাইকে বিয়ে করেন।
রাজো একসঙ্গে এক বাড়িতেই থাকেন পাঁচ স্বামীকে নিয়ে। এক এক স্বামীর সঙ্গে এক রাত্রে মিলিত হন তিনি। ‘প্রথম প্রথম একটু অস্বস্তি হতো এই ব্যবস্থায়, এখন কিছু মনে হয় না। আমার পাঁচ স্বামীকেই একইরকম সুযোগ দিই আমি।’ ১৮ মাসের একটি ছেলেও রয়েছে রাজোর। কিন্তু সেই ছেলের প্রকৃত পিতা কে, তা জানেন না রাজো নিজেও।
আর মহাভারতের পাণ্ডবদের মতোই তাঁর স্বামীরাও পাঁচ ভাই।
মহাভারতের কুন্তীর পাঁচ পুত্র, যুধিষ্ঠির, ভীম, অর্জন, নকুল এবং সহদেব। পঞ্চপান্ডব। তারা রাজাদের প্রতিহত করে দ্রৌপদীকে কুম্ভকারের ঘরে যখন নিয়ে আসেন তখন রাত গভীর। অর্জুন মা কুন্তীকে বললেন, “মা, ভিক্ষা নিয়ে এসেছি।” কোনো কিছু না দেখেই কুন্তী ঘরের ভেতর থেকে জবাব দিলেন, “সকলে মিলে ভোগ করো।” সেই থেকে দ্রৌপদী হয়ে গেলেন পাঁচভাই এর স্ত্রী। এই বর অবশ্য দ্রৌপদী আগেই লাভ করেছিলেন।
তপস্যায় তিনি মহাদেবকে সন্তুষ্ট করার পর মহাদেব তাকেঁ অভীষ্ট বর প্রার্থনা করতে বললেন, দ্রৌপদী বলেন, “সর্বগুণসম্পন্ন পতি চাই।” এই কথাটা দ্রৌপদী পাঁচবার বলেছিলেন, মহাদেবের বর মতে তাই দ্রৌপদীর পাঁচ স্বামীর বিবাহে জড়াতে হয়। কেমন ছিল তার ঘর-সংসার? পাঁচ স্বামীর এক একজনের সঙ্গে এক বছর করে সংসার যাপন করতে হতো।
‘প্রথম প্রথম একটু অস্বস্তি হতো এই ব্যবস্থায়, এখন কিছু মনে হয় না। আমার পাঁচ স্বামীকেই একইরকম সুযোগ দিই আমি।’
কিন্তু হঠাৎ পাঁচ ভাইকে এক সঙ্গে বিয়ে করতে গেলেন কেন রাজো? পাঁচ ভাইয়ের এক ভাই গুড্ডুর সঙ্গে রাজোর বিয়ে হয় ৪ বছর আগে। বিয়েটা হয়েছিল উভয় পক্ষের বাবা-মা’র দেখাশোনার মাধ্যমে। বিয়ের পরে রাজো বুঝতে পারেন, পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড়। রাজোর মনে জাগে আশঙ্কা, বিয়ের পর গুড্ডু বউকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়বেন না তো, অবিবাহিত ভাইদের সঙ্গে তাঁর ভাতৃত্ব-বন্ধন শিথিল হয়ে যাবে না তো? তখনই রাজোর মনে আসে মহাভারতের দ্রৌপদীর দৃষ্টান্ত।
রাজো সিদ্ধান্ত নেন, তিনি গুড্ডুর অন্য ভাইদেরও বিয়ে করবেন পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে সম্পর্ক অক্ষুণ্ণ রাখার জন্য। আপত্তি ছিল না গুড্ডুরও। ফলে একে একে বইজু, সন্ত রাম, গোপাল এবং দীনেশকেও বিয়ে করেন রাজো। জ্যেষ্ঠ ভাই বইজুর বয়স ৩২ বছর, কনিষ্ঠ দীনেশ ১৯ বছর।
পরিবারে অশান্তি হয় না? বিশেষত স্ত্রী-এর শারীরিক অধিকার নিয়ে? উত্তর দেন গুড্ডুই, ‘উঁহু, আমাদের পরিবার ছোট পরিবার না হতে পারে, কিন্তু আমাদের পরিবারে কোনো অশান্তি নেই। আমরা প্রত্যেকেই রাজোর সঙ্গে মিলিত হই, কিন্তু এই নিয়ে আমার কোনো যৌন ঈর্ষা বোধ হয় না।’
আর রাজো, কী বলছেন তিনি নিজে? তাঁর বক্তব্য, ‘আমার মা-ও তো তিন ভাইকে বিয়ে করেছিলেন। আমি আমার স্বামীদের সঙ্গে আলাদা আলাদা করে রাত্রি যাপন করি। আমাদের ঘরে কোনো বিছানা নেই। মাটির উপর পুরু করে কম্বল পেতে নিয়ে আমরা শুয়ে পড়ি’ পাঁচ স্বামীকে নিয়ে। সমস্যা হয় না? লাজুক হেসে রাজোর উত্তর- ‘একটুও না। বরং অন্য বিবাহিত মেয়েদের থেকে অনেক বেশি ভালবাসা পাই আমি।’ ভালবাসার স্থান যে যৌন ঈর্ষা ও যৌন হিংসার অনেক উপরে সেই কথাই যেন প্রমাণ করছে রাজোদের পরিবার।