তৃতীয় শ্রেণির ক্লাসে যোগফলে ভুল শিক্ষিকার, ভিডিও ভাইরাল

অনলাইন আপডেট ডেস্ক- করোনাকালে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় সংসদ টেলিভিশনে চলছে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের শ্রেণি শিক্ষা কার্যক্রম। যেখানে দেশ সেরা শিক্ষকরা নিচ্ছেন স্ব স্ব বিষয়ের ক্লাস। সেখানেই গণিতের ক্লাসে ভুল যোগফল শিখিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হাসির খোরাক হয়েছেন একজন শিক্ষিকা। তার ভিডিওটি অন্তর্জালে ছড়িয়ে পড়েছে।

ভিডিও ক্লাসে দেখা যায়, তৃতীয় শ্রেণির গণিত বইয়ের তিন নম্বর অধ্যায় (যোগ) পড়াচ্ছেন ওই শিক্ষিকা। সেখানে তিনি শতকের ঘরের আলাদা আলাদা তিনটি সংখ্যার যোগ শেখাতে গিয়ে পাঁচ আর একের যোগফল বলেন তিন। যদিও আসল যোগফলটি হবে ছয়। এছাড়া মোট যোগফল ৭১৪ এর জায়গায় তিনি শেখান ৬৮৪।

কেউ একজন ভিডিওর এই অংশটি রেকর্ড করে অন্তর্জালে ছড়িয়ে দিলে এ নিয়ে হাসি-ঠাট্টায় মেতে ওঠেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারীর কেউ কেউ। এটিকে ‘মানবিক ভুল’ দাবি করে এর পক্ষে-বিপক্ষে যুক্তি তর্কও হয়।

শাহাদাত নামে একজন ইন্টারনেট ব্যবহারকারী লিখেছেন, এই শিক্ষিকার ক্লাস দেখে পিঙ্ক ফ্লয়েডের ‘এনাদার ব্রিক ইন দি ওয়াল’ গানটির কথা মনে পড়ে গেলো। এরা ভুল শেখায়, ভুলভাবে শিশুদের মনকে নিয়ন্ত্রণ করে। অথচ এটার কোনো প্রয়োজনই ছিল না।

নাসির খান নামে একজন বলেন, শিক্ষক মানে কেবল বাংলা, ইংরেজি, অংক মোটামুটি জানলেই হলো, এমন কিছু না। শিক্ষক হতে হবে চিন্তায়, মননে, রুচিতে, সৃজনশীলতায়, ভাবনায়, মেধায় অন্য মানুষদের চেয়ে এগিয়ে। এমন কজন আছে?

তার মতে, নিয়োগের দুর্নীতি আর নারী নিয়োগের বেলায় নিয়ম-কানুনের শিথিলতায় এতদিনে এমনসব (নিম্নমানের) শিক্ষকে প্রাথমিক শিক্ষা ছেয়ে গেছে।

তবে ওই শিক্ষিকার পাশে দাঁড়িয়েছেন অনেক শিক্ষক নেতা ও সহকর্মীরা। বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক ঐক্য পরিষদের সদস্য সচিব মোহাম্মদ শামসুদ্দিন মাসুদ বলছেন, ‘এই দায় মোটেও শিক্ষিকার না, এ দায় সম্পূর্ণ প্রোগ্রাম পরিচালকের। একটা ভিভিও প্রোগ্রামে উপস্থাপক, অভিনেতা, অভিনেত্রী হলেন পুতুলমাত্র! নির্দেশনা আসে পরিচালক, সহকারী পরিচালকের কাছ থেকে। হয়ত আপনারা বলবেন একজন শিক্ষক ক্লাস নিবেন এখানে আবার পরিচালক কেন?

আমার প্রশ্ন যদি পরিচালক, সম্পাদক, বিশ্লেষক না থাকেন তাহলে প্রোগ্রাম শেষে এত এত নাম যে ক্লাস শেষে টিভি মনিটরে ভেসে উঠে; এরা কারা?

মাসুদ আরো বলছেন, ‘স্নায়ুবিক দুর্বলতা অথবা অতি আত্মবিশ্বাসের কারণে শিক্ষক হয়ত ভুলটা করেছেন। কিন্তু পাশ থেকে কেউ না কেউতো মনিটরিং করেছেন। উনি কী করেছেন? এটা এমন একটা ভুল সেখানে উপস্থিত যে কেউ ধরার ক্ষমতা রাখেন। যদি আপনার পরিচালক না থাকেন, বিশ্লেষক না থাকেন তাহলে এতবড় প্রজেক্ট কেন হাতে নেওয়া হয়েছে?

দোষের সময় যদি শিক্ষক হন, তাহলে শিক্ষকদের ভিডিও সম্প্রচার করে এটুআই পেইজ যে লক্ষ লক্ষ টাকা ইনকাম করে নেয়, যার সিকিভাগও শিক্ষকরা পান না; তাদের দায় কতটুকু হবে?’

এদিকে শিক্ষক নেতা মাসুদ ছাড়াও ওই শিক্ষিকার পাশে রয়েছে সংশ্লিষ্ট অনেকেই। মো. শরিফ উদ্দিন নামে এক শিক্ষক লিখেছেন, ‘মানুষ মাত্রই ভুল হয়। কিন্তু একজন ম্যাডামের ভুল নিয়ে অন্যের চেয়ে আমাদের শিক্ষকদের সমালোচনা কষ্টদায়ক। আমরা কি ক্লাশে এমন ভুল কখনো করিনি?’

মাহমুদুল হাসান নামে একজন লিখেছেন, ভুল সবার ই হতে পারে! কেউ বলতে পারবে না, শেণিকক্ষে কখনো আমার কোনো ভুল হয়নি। অনেক সময় শিক্ষার্থীই আমার ভুলটি ধরে, তখন কিন্তু আমার তৃপ্তি হয়। কারন, শিক্ষার্থীটি পাঠটি বুঝতে পেরেছে। হয়তো নেক্সট কোনো গনিত প্রতিযোগিতায় তাকেই আমি সিলেক্ট করি।

৬০ শিক্ষার্থীর সামনে পাঠ দিতে গিয়েই অনেক শিক্ষক নার্ভাস হয়ে যান; যদি কোনো কর্মকর্তার সামনে পাঠটি দিতে হয়। আর যখন মাথায় থাকে, সমগ্র দেশ আমার পাঠটি দেখছে তখন এটা সত্যিই সহজ কাজ না অনেকের জন্য! তবে হ্যা, অবশ্যই আরো যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষক আছেন যাদের ক্যারেরাভীতি নাই, যারা সাবলীল পাঠ দিতে সক্ষম। ভবিষ্যতে শিক্ষক নির্বাচনের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের আরো সতর্ক হতে হবে।

সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার কুশাল রনি বলছেন, একজন সম্মানিত শিক্ষক অনলাইনে ক্লাস নিতে গিয়ে ভুল করেছেন। বিষয়টা এমন নয় যে আমাদের শিক্ষকরা যোগ করতে পারেন না। যারা শিক্ষকতা পেশায় আছেন সবাই যোগ্যতা নিয়েই আছেন। যারা অনলাইনে পাঠদানে অংশগ্রহণ করছেন, উনারাও যোগ্যতার বলেই অংশগ্রহণ করছেন। ভুল মানুষের হতেই পারে। একটা ভুল নিয়ে এভাবে ট্রল করার কোন মানে নেই। যারা শেয়ার দিয়ে সবাইকে জানান দিচ্ছে তাদের প্রতি সমবেদনা।

একটা বিষয় শুধু ভাবাচ্ছে, শ্রেণীপাঠদান তো লাইভ দেখানো হয়নি। এটা পূর্বে তৈরি করে পরে রুটিন অনুযায়ী দেখানো হয়েছে। এরমধ্যে অনেক কাজই করতে হয়েছে, টেলিভিশনে প্রচারের আগে কারও নজরে আসলো না ভুলটা!

বিষয়টি নিয়ে কথা হয় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. ফসিউল্লাহর সঙ্গে। বুধবার তিনি বলেন, তৃতীয় শ্রেণীর অংক ক্লাসে যোগফল করতে ভুল করেছেন। বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে, আমরা ভুলের কারণ জানতে চেয়েছি। ভুলবশত এটি হয়েছে বলে এই শিক্ষক জানিয়েছেন।

মহাপরিচালক বলেন, তৃতীয় শ্রেণীর ক্লাসটি সংশোধন করে আমরা পুনরায় প্রচার করার ব্যবস্থা করব। পাশাপাশি ভবিষ্যতে সবাইকে ভুল থেকে সতর্ক থাকতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

রেকর্ডিং ক্লাসগুলো প্রচারের আগে রিচেক করা হয় কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যিনি এক্সপার্ট ওনি দেখেই দেন। হয়তো উনারও চোখে পড়েনি। যাই হোক, আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি।

উল্লেখ্য, করোনাভাইরাসের প্রকোপে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছুটি থাকায় প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শ্রেণি কার্যক্রম টেলিভিশন এবং অনলাইনে প্রচার করা হচ্ছে।

ষষ্ট থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত মাধ্যমিকের শ্রেণি কার্যক্রম সংসদ টেলিভিশনে সম্প্রচার শুরু হয় গত ২৯ মার্চ থেকে। আর প্রাথমিকের ক্লাস সংসদ টেলিভিশনে শুরু হয় গত ৭ এপ্রিল থেকে।

Facebook
Twitter
WhatsApp