রাবেয়া মাশফেরাত মেরী, লাইফস্টাইল কন্ট্রিবিউটর, অনলাইন ডেস্ক। উকুন নামক শব্দটির সাথে বেশির ভাগ মেয়েই কম বেশি পরিচিত। বিরক্তিকর একটি বিষয় এই উকুন, যার হয় তার অবস্থা পুরো খারাপ করে দেয়। সারাক্ষণ একটা অস্থিরতা,বিরক্তিকর,খিটখিটে অবস্থার মাঝে থাকতে হয় এটির জন্য।
উকুন হচ্ছে খুব ক্ষুদ্র,পাখাবিহীন এক ধরণের প্যারাসাইটিক কীট যা কিনা রক্ত খায় মানুষের। উকুন খুব সহজভাবে ছড়ায় স্কুল বাচচাদের মাধ্যমে।
কয় ধরণের উকুন আছেঃ
১)হেড লাইস(Head Lice): এই উকুন মাথায় হয়।চুলের উপরে এবং ঘাড়ের ধারে এদের হাটতে দেখা যায়।
২)বডি লাইস(Body Lice):এই উকুন জামা-কাপড়ের মাঝে থাকে,বিছানায় থাকে যা কিনা খুব সহজে স্কিনে চলে আসে রক্ত খাওয়ার জন্য।এই উকুন সাধারনত তাদের আক্রমণ করে যারা কিনা ঠিকমত গোসল করেনা,ঠিকমত নিয়মিত জামাকাপড় চেঞ্জ করেনা।
৩)পিউবিক লাইস(Pubic Lice): সাধারণত এদের ক্র্যাব বলা হয়। এরা সাধারনত পিউবিক এরিয়াতে থাকে,তাছাড়া কিছু কিছু বুকের চুল এবং আইভ্রু তেও থাকে।
লক্ষণঃ
১)চুলকানি হয় যেখানে এরা কামড় দেয়
২)যখন এরা চুল দিয়ে হাটে তখন সুরসুরির মত একটা অনুভুতি হয়
৩)উকুনের ডিমকে অনেক সময় খুশকির মত দেখা যায় কিন্তু শ্যাম্পু করার পর ও এরা মাথা থেকে যায়না
৪)অনেক সময় মাথার ভেতর ছোট ছোট ক্ষত দেখা যায়
কেন উকুন হয়ঃ
১)একজনের মাথা থেকে আরেক জনের মাথায় যেতে পারে
২)একজনের হেডফোন আরেকজন ব্যবহার করলে ও ছড়াতে পারে
৩)একজনের অনেক দিনের জামা-কাপড় পড়লে ও হতে পারে
৪)একজনের সাথে আরেকজনের সেক্সের মাধ্যমে পিউবিক লাইস ছড়াতে পারে।
চিকিৎসাঃ
হেড লাইসঃ-
১)যেসব শ্যাম্পুতে পাইরিথ্রিন অথবা পারমেথ্রিন আছে সেগুলো প্রথম ব্যবহার করতে পারেন।
২)মালাথিওন (Malathion) নামক এক ধরণের ওষুধ আছে যা আপনি ব্যবহার করতে পারেন মাথায় কিন্তু তা অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী।
৩)বেনজাইল এলকোহল লোশন ব্যবহার করতে পারেন এবং এটি জাস্ট ১০ মিনিট ব্যবহার করে তারপর মাথা ধুয়ে ফেলতে হবে, প্রতি ৭ দিন অন্তর ব্যবহার করতে হব একই নিয়মে তবে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী।
৪)ইভারমেকটিন(Ivermectin) লোশন ব্যবহার করতে পারেন, মাথার উকুনের জন্য এটি একবার ব্যবহার করলেই হবে। এই লোশন প্রথমে শুকনা চুলে দিয়ে তারপর ১০ মিনিট রাখতে হবে,তারপর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া এই পদ্ধতি ভুলেও করা যাবেনা।
এই লোশন ব্যবহার করলে কিছু সমস্যা হতে পারে যেমনঃ চোখ লাল হয়ে যাবে,ড্যানড্রাফ দেখা দিবে,স্কিন ড্রাই হবে,যেখানে এটি দেয়া হয় সেখানে বার্নিং সেনসেশন হয় মানে মনে হয় যেন জায়গাটা পুড়ে যাচ্ছে।
৫)মাথার উকুনের জন্য আরেকটি নতুন ওষূধ হচ্ছে স্পাইনোস্যাড সাসপেনশন(ন্যাটরোবা)। এটি শুকনো চুলে দিয়ে ১০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলতে হবে। এটি দেয়ার পর যদি মনে হয় যে উকুন বেচে আছে তাহলে নেক্সট সাত দিন পর একই পদ্ধতিতে আবার দিবেন।
এটি দেয়ার পর চোখ খুব লাল হয়ে যেতে পারে।
৬)উপরোক্ত কোন চিকিৎসা দিয়েই যদি উকুন না কমানো যায় তাহলে লিনডেন ওষুধ দেয়া হয়।
বডি লাইসঃ-
যদি কারো বডি লাইস হয়ে থাকে তাহলে সেক্ষত্রে তেমন কোন চিকিৎসার দরকার হয় না। এক্ষেত্রে নিজের যত্ন নিজের ঠিকমত নিতে হবে। নিজের জামা-কাপড় ঠিকমত পরিষ্কার রাখতে হবে,ঠিকমত নিজের শরীরের যত্ন নিতে হবে।
পিউবিক লাইসঃ-
ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নিতে হবে।
উপযুক্ত জীবনযাপনের মাধ্যমে কিভাবে উকুন থেকে দূরে থাকবেন তার কিছু উপায়ঃ
১)আপনার বাচ্চাকে কিছু বিষয়ে নিজ থেকে সচেতন করতে হবে,তারা যেন খেলাধূলা কিংবা অন্য যে কোন কাজের সময় একজনের মাথা আরেকজনের মাথার সাথে না লাগায়,এতে করে কিছুটা হলে ও উকুন হওয়া থেকে দূরে থাকতে পারবে বাচচারা কারণ বাচচাদেরই এটা বেশি হয়ে থাকে।
২)আপনার বাচ্চা যেন তার ব্যবহার করা জিনিস অন্য কাউকে ব্যবহার করতে না দেয় এই ব্যাপারে তাকে সচেতন রাখবেন কারন অনেক সময় একজনের ব্যবহার করা টুপি অথবা স্কার্ফ অথবা কোর্ট অথবা যে কোন জামা-কাপড়ের মাধ্যমে উকুন আসতে পারে।
৩)তাছাড়া আপনার বাচ্চার বা যার মাথায় উকুন হয়েছে সে নারিকেলের তেল অথবা অলিভ তেল অথবা রোজমেরি ব্যবহার করতে পারে কারণ এই তেলগুলো উকুন নিরাময়ে অনেক সাহায্য করে।