স্বাস্থ্য ও চিকিৎসাঃ মুখের ঘা অস্বস্তিকর একটি সমস্যা। ছোট বড় সব বয়সের মানুষেরা এই সমস্যায় পড়ে থাকে। সাদাটে ছোট ছোট এই ঘা বেশ কষ্টদায়ক হয়। সাধারণত মুখের ভিতর, জিহবা, ঠোঁট, দাঁতের মাড়িতে হয়ে থাকে। সাধারণত ৩ ধরণের মুখে ঘা দেখা যায়। মাইনর আলসার, যা ২ সপ্তাহের মধ্যে সেরে যায়। মেজর আলসার, এটি এক মাস পর্যন্ত স্থায়ী হয়ে থাকে। হারপেটিফ্রম আলসার, এটি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অনেকগুলো ঘা নিয়ে একটি বড় ঘা হয়ে য়ায়। বিভিন্ন কারণে মুখে ঘা হতে পারে। এর মধ্যে জ্বর, রক্ত স্বল্পতা, ফুড অ্যালার্জি, পুড়ে যাওয়া, স্ট্রেস, অতিরিক্ত অ্যাসিডিটি, ভিটামিনের অভাব এই ঘা হয়। ঘায়ের তীব্র ব্যথার কারণে অনেকে ঠিকমত খেতে পারেন না।
মুখের আলসার হওয়ার কারন-
কেন এই আলসার হয় তার কারন এখনও শতভাগ জানা যায়নি। তারপরেও কিছু কারন বিজ্ঞানীরা বের করেছেন যার ফলে এই আলসার হতে পারে।
১) ভিটামিন, আয়রন স্বল্পতা। যেমন ভিটামিন বি৬, ভিটামিন বি১২ অথবা অন্য কোন ভিটামিন।
২) হরমোনাল কারনে হতে পারে। অনেক সময় মেয়েদের মাসিক এর আগে অথবা পরে এই আলসার হয়। মেনোপজ এর পরেও এই আলসার হতে মারে।
৩) মুখের মাড়ি আঘাতগ্রস্ত হলে। জোরে জোরে দাঁত ব্রাশ করলে।
৪) ধূমপান, নেশা জাতীয় জিনিস,পান,মদ খেলেও মুখে ঘা হয়।
৫) যাদের এইডস, Diabetes, ক্যানসার আছে তাদের হয়।
৬) রাতে ঘুম না হলে, অনেক বেশি দুশ্চিন্তা করলে মুখে ঘা হতে পারে।
৭) বংশ গত কারনেও মুখের ভিতর আলসার হয়।
৮) মুখে অ্যালার্জি থাকলেও ঘা হয়।
৯) ঠাণ্ডা লাগলে মুখে ঘা হতে পারে।
ওষুধ ছাড়াও ঘরোয়া কিছু উপায়ে এই ঘা ভাল করা সম্ভব।
15227″ src=”http://www.bengalieye.com/wp-content/uploads/2016/07/gha.bmp” alt=”gha” width=”288″ height=”150″ />যষ্টিমধু: যষ্টিমধু মুখের ঘা সারাতে বেশ কার্যকর। ১ টেবিল চামচ যষ্টিমধু ২কাপ পানিতে ২ থেকে ৩ ঘন্টা ভিজিয়ে রাখুন। এটি দিয়ে দিনে কয়েকবার কুলকুচি করতে হবে। যষ্টিমধুর অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরী এবং অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল উপাদান মুখের ঘা ভাল করে থাকে।
টি ব্যাগ: মুখের ঘা দূর করার আরেকটি উপায় হল টি ব্যাগ। এটি খুব দ্রুত ব্যথা এবং ইনফ্লামেশন দূর করে দিয়ে থাকে। একটি টি ব্যাগ ঠান্ডা পানিতে ভিজিয়ে সেটি ঘায়ের স্থানে ভালো করে লাগাতে হবে। লাগানোর সাথে সাথে আপনার ব্যথা কমিয়ে দিয়ে দিবে।
নারকেল তেল: মুখের ঘা নারকেল তেল দিয়ে দূর করা সম্ভব। একটি তুলোর বলে নারকেল তেল লাগিয়ে মুখের ঘায়ে লাগান। নারকেল তেলের অ্যান্টি মাইক্রোবিয়াল উপাদান ঘা সারিয়ে তুলতে আপনাকে সাহায্য করবে।
তুলসি: কয়েকটি তুলসি পাতাসহ পানি দিনে ৩ থেকে ৪ বার পান করুন। এটি দ্রুত মুখের ঘা প্রতিরোধ করবে এবং মুখে ঘা হওয়ার প্রবণতা কমিয়ে দিবে।
মধু: একটি তুলোর বলে মধু লাগিয়ে নিতে হবে। এবার এটি মুখের ঘায়ের স্থানে লাগান। এছাড়া মুখের ঘায়ের স্থানে গ্লিসারিন, ভিটামিন ই অয়েল লাগাতে পারেন।
এছাড়াও আরও কিছু টিপস
১) বাইরের পানীয় থেকে বিরত থাকা। মসলা যুক্ত খাবার পরিহার করা।
২) রাতে কমপক্ষে ৮ ঘণ্টা ঘুমান।
৩) ভিটামিন সাপ্লিমেন্ট নেওয়া।
৪) নরম দাঁত ব্রাশ ব্যবহার করা, মুখে কোন চাপ না দেওয়া।
৫) মোটামুটি ভাবে ৭ দিনের মধ্যে এই ঘা ভালো হয়ে যায়। যদি ভালো না হয় অথবা ব্যথা থাকে তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ মাফিক carmellose sodium, benzocaine gels যুক্ত পেস্ট ও জেল মুখে লাগানো যায়। Chlorhexidine mouthwash মাউথ অয়াশ মুখের ব্যথা দূর করতে সাহায্য করে। বাজারে Bongel cream, viodin mouthwash, riboflabin পাওয়া যায়, যেটা মুখের ঘা এর জন্য ভালো।
৬) ঘরে বসে গরম পানিতে লবন অথবা বেকিং সোডা দিয়ে কুলি করলে আরাম পাবেন। তাছাড়া ১ চিমটি বেকিং সোডা আর একটু পানি নিয়ে মিশিয়ে ঘা এর উপর লাগিয়ে রাখতে পারেন। ঘা এর উপর পিয়াজ দিলে খুব তাড়াতাড়ি উপকার পাবেন, কিন্তু অনেক ব্যথা বাড়বে। ভিটামিন ই ক্যাপসুল ঘা এর উপর ভেঙ্গে দিন। অথবা টি ব্যাগ ঘা এর উপর রেখে দিন। এতেও দ্রুত নিরাময় হয়।
৭) মিল্ক অফ মেগ্নেসিয়া ঘা এর উপর দিলে অনেক ভালো হয়। এটি মুখের ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে।
৮) প্রতিদিন টক দই খাবেন।