ভারতের একটি স্থানে এক ধরনের প্রথা বেশ ছড়িয়ে পড়ছে হিন্দু পুণ্যার্থীদের কাছে। তারা দাবি করেছেন, কুমারী গাভীর বিশুদ্ধ প্রস্রাব পান তাদের সবরকম রোগ থেকে আরোগ্য দান করে। এমনকি এতে মরণব্যাধি ক্যান্সার থেকেও মুক্তি মেলে! যুক্তরাজ্যভিত্তিক ডেইলি মেইল এ বিষয়ে একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়, হিন্দু ধর্মে বিশ্বাসীরা মনে করেন, গরু একটি পবিত্র ও স্বর্গীয় প্রাণী। এর প্রস্রাবও স্বর্গীয়। ফলে তা তাদের সবধরনের সম্পদকে বিপদমুক্ত রাখে। সারিয়ে তোলে রোগবালাই।
৪২ বছর বয়সী জয়রাম সিঙ্গাল নামের এক ব্যক্তি জানান, তিনি দশ বছর ধরে গরুর প্রস্রাব পান করে আসছেন। এই প্রস্রাবেই তিনি তার স্বাস্থ্যের উপকার লাভ করেছেন।
সিঙ্গাল বলেন, “আমার ডায়বেটিস ছিল। কিন্তু যেদিন থেকে আমি গরুর প্রস্রাব পান করা শুরু করলাম, সেদিন থেকে ডায়বেটিসের মাত্রা পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে চলে আসে।”
“১২ বছর ধরে আমাদের বেশ কিছু গরু রয়েছে। ভোরে ঠিক প্রথমেই আমরা গরুর প্রশ্রাব নিই। এরপর তা পান করি।” বলেন তিনি।
উত্তর ভারতের আগ্রা শহরের এক পল্লীতে থাকেন সিঙ্গাল। সেখানে তার গোয়াল ঘরে বেশ কিছু গরুর পাশে কম করে ৩০-৩৫ জন মানুষ ভিড় করেছিলেন।
তাদের সবার হাতে দেখা যায় গ্লাস ও বিভিন্ন পাত্র। ঘুম থেকে ওঠার পরপর গরুর একেবারে ভোরের প্রথম প্রস্রাবটি নেওয়ার জন্য অপেক্ষা করছিলেন তারা।
সিঙ্গাল বলেন, “এখানে অনেক লোকজন আসেন। ধীরে ধীরে লোকের সংখ্যা বাড়ছেই। আমরা ভোরে গরুর পাশে একত্রিত হই। এবং একেবারে টাটকা প্রস্রাবটিই পান করি। মা গাভী তার নিজের থেকে আমাদের এই প্রস্রাবখানা দান করেন।”
“কয়েক বছর আগেও আমাদের এই গোয়াল থেকে গাভীর প্রস্রাব নিতে কেউ খুবই একটা আগ্রহী ছিল না।” জানান তিনি।
তিনি বলেন, “এখন অসংখ্য মানুষ আসছে আমাদের এই গোয়ালে। প্রায়ই ক্যান্সারের রোগীরা আসেন। তারা এই গাভীর প্রস্রাবের উপকার পেতেই তো আসেন!”
অনেকে জানান, সম্প্রতি এই গোয়ালে গাভীর প্রস্রাব নিতে আসা লোকজনের সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে। এর কারণ, আধ্যাত্মিক নেতা ও গুরুরা এই প্রস্রাব পান করার ব্যাপারে প্রচার করছেন ও পরামর্শ দিচ্ছেন।
এই প্রথায় বিশ্বাসীরা দাবি করে বলেন, মরণব্যাধি ক্যান্সার, ডায়বেটিস, টিউমার, হৃদরোগ, পাকস্থলির সমস্যা ও আরো নানা রোগ মোকাবেলায় গাভীর প্রস্রাব বেশ সফলভাবেই সেবন করা যায়। শুধু তাই নয়, টাক সমস্যার কার্যকর এবং একমাত্র সফল সমাধান হলো গাভীর প্রস্রাব পান করা।
সাধু ও ধর্মতাত্ত্বিক রমেশ গুপ্ত বলেন, “এই বিশ্ব জগতে দুটি জিনিস সবচেয়ে বিশুদ্ধ ও পবিত্র। একটি হলো পবিত্র গঙ্গার পানি, আরেকটি হলো পবিত্রতম মা গাভীর প্রস্রাব।”
রমেশ গুপ্ত বলেন, “প্রাচীন হিন্দু ধর্মগ্রন্থগুলোতেও গাভীর প্রস্রাবের কথা উল্লেখ করা আছে। মানবদেহে এর বেশ ভালো কার্যকারিতা রয়েছে এবং এটি ঈশ্বরের পক্ষ থেকে এক স্বর্গীয় দান। এ বিষয়ে আসলে কেউই সন্দেহ পোষণ করতে পারে না।”
প্রস্রাব পান করতে আসা লোকজন দিনে দিনে বেড়ে যাওয়ায় সিঙ্গাল গরুর সংখ্যা আরো বাড়ানোর পরিকল্পনার করছেন। শুধু তাই নয়, লোকজনের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় তিনি প্রস্রাব বিক্রিও করা শুরু করে দিয়েছেন। এতে তার প্রচুর অর্থ আসছে। একইসাথে সিঙ্গাল লোকজনের চাহিদা ও নিজের আর্থিক অবস্থান আরো সুসংহত করতে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে গরুর প্রস্রাব বিভিন্নভাবে উৎপাদন করতে চাচ্ছেন।
বাজারে আরো ছড়িয়ে দিতে তিনি নানা উদ্যোগের কথাও ভাবছেন। সিঙ্গাল বলেন, “এই প্রস্রাবকে আমরা নানা উপায়ে বাজারজাত করতে পারি। এতে আসলে ব্যবহারের ধরনটাই গুরুত্বপূর্ণ।”
তিনি বলেন, “আমরা গাভীর প্রস্রাব দিয়ে চোখের ড্রপ, পাকস্থলীর বিভিন্ন সমস্যার ওষুধ, টুথপেস্ট, গায়ের সাবান, হার্বাল পাউডার ও আরো অনেক কিছু উৎপাদন করতে পারি।”