স্বাস্থ্য ডেস্ক :চুলকানি মানুষের রোগের ইতিহাসে সবচেয়ে প্রাচীন। এটি একটি সাধারণ ব্যাধি। সম্ভবত এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না, যাদের জীবনে কখনো চুলকানির কোনো অনুভূতি হয়নি।
এ পর্যন্ত চুলকানি নিয়ে অসংখ্য গবেষণা হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা চুলকানির কারণ ও রহস্যের সঠিক এবং পরিপূর্ণ কোনো ব্যাখ্যা দিতে পারেন নি।
অবশেষে সম্প্রতি তারা চুলকানির রহস্য সম্পর্কে আপাত একটি ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তারা জানান, মৃদু ব্যাথার অনুভূতিই চুলকানির জন্ম দেয়। রক্তে কিছু বিশেষ ধরনের নিউরন কেমিক্যাল এনপিপিবি তৈরি করে যার কারণে চুলকানির অনুভূতি তৈরি হয়। খবর এভরিডে হেল্থ-এর।
২০১৩ সালের মে মাসে কানাডার মলিকিউলার জেনেটিসিস্ট এবং ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ ডেন্টাল অ্যান্ড ক্র্যানিফোশিয়াল রিসার্চের মার্ক হুন এই তথ্য আবিষ্কার করেন।
কিছু ইঁদুরের ওপর পরীক্ষা চালিয়ে তিনি এ সিদ্ধান্তে আসেন। তাতে তিনি দেখতে পান, ইঁদুরগুলোর শরীর থেকে এনপিপিবি বের করে নিলেও এদের ব্যাথা বা গরমের অনুভূতি হয়। কিন্তু চুলকানির অনুভূত হয় না।
হুন জানান, “এনপিপিবি উত্পন্নকারী নিউরোনের সন্ধান খুলে দেবে নতুন রাস্তা। এই আবিষ্কার থেকেই সম্ভব হবে নতুন ওষুধ তৈরি। সিরোসিস, এগজিমা, এলার্জি ও অন্যান্য চুলকানির জন্য কার্যকরী ওষুধ তৈরি করা যাবে এর থেকেই।”
এই রোগের প্রতিকার সম্পর্কে পরামর্শ দিয়েছেন চর্ম ও যৌন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. শাহাবউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী
বাংলাদেশে ত্বকের যে সব রোগ সব চেয়ে বেশি দেখা যায় তার মধ্যে অন্যতম হলো খোস-পাঁচড়া। সাধারণ ভাবে কর্মজীবী মানুষদের মধ্যে এ রোগের প্রকোপ তুলনামূলক ভাবে বেশি দেখা দেয়। এ ছাড়া যাদেরকে অহরহ নানা ধরণের মানুষের সংস্পর্শে যেতে হয় বা যারা গাদাগাদি করে থাকনে তাদেরও এ রোগ হয়।
আলোচনার শুরুতেই একটা কথা মনে করিয়ে দিতে চাই আর তাহলো খোস-পাঁচড়া সাধারণ রোগ নয় এবং এ রোগের সঠিক চিকিতসা না হলে কিডনি ফেল করে মারাত্মক পরিণতি ডেকে আনতে পারে।
বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে তুলনামূলক ভাবে একটা গরীব দেশ। সেইজন্যে আমাদের দেশে সবচেয়ে বেশি যে চর্মরোগ পাওয়া যায় সেটা হলো scabies বা যাকে আমরা বাংলায় খোস পাঁচড়া বলে থাকি। এরপর দাদ যাকে আমরা ফাঙ্গাল ডিজিজ বলে থাকি এটাও বেশি হয়।
একজিমা রোগ হয়ে থাকে এবং সভ্যতার বা নগরায়নের সাথে সাথে এই রোগটার প্রাদুর্ভাব বাড়ছে। আর মেয়েদের মাথার উকুন রোগটাও বেশি হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে সোরিয়াসিস রোগটাও ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
খোস পাঁচড়া বেশি হয়ে থাকে সাধারণত কর্মজীবী মানুষদের। সোশ্যাল কন্টাক্ট যাদের বেশি তাদের বেশি হয়ে থাকে। আর যারা ওভারক্রাউডিং অবস্থায় থাকে অর্থাত একই জায়গায় বা একই বিছানায়, একই লেপের নিচে একাধিক ব্যক্তি থাকে এই ধরনের লোকদের বেশি হয়।
অন্যদিকে শিশুদেরকে সবাই আদর করে; আর আদর করতে গিয়ে মানুষের সংস্পর্শে যায় বা স্কিনের কনটাক্ট হয়- এর মাধ্যমে শিশুরা এই রোগে বেশি আক্রান্ত হয়।
কোনো ব্যক্তির দেহে যে কোনো কারণে যদি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় তাহলে তাদের এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশংকা বেড়ে যায় এবং এ রোগের ক্ষতিকর প্রভাবগুলো বেশি পরিমাণে হয়ে থাকে।
এ রোগটি এমন একটা রোগ যার লক্ষণই রোগের নামের কথা বলে দেয়। অর্থাত এ রোগের প্রথম লক্ষণ হলো চুলকানি। আর এইজন্য খোস পাঁচড়াকে অনেক চুলকানি রোগও বলে থাকে।অবশ্য এ চুলকানিটা দিন রাত উভয় সময়েই হয়ে থাকে। তবে প্রধানত এটা টলারেবল লিমিটে থাকে। সহ্যসীমার মধ্যে থাকে। তবে রাতের বেলায় একেবারে সহ্যসীমার বাইরে চলে যায়। রাতে অনেক বেশি বেড়ে যায়। অর্থাত এই রোগ দিনে এবং রাতে সবসময় চুলকানি থাকলেও রাতে এটা বাড়ে।
এছাড়াও চামড়ায় আরো কিছু বিষয় আছে যাকে আমরা মেডিকেলের ভাষায় ব্যারো বলি। অর্থাত মটিতে লাঙল চষলে যা ঘটে সেটাকে ব্যারোইন বলা হয়। খোস পাঁচড়ার জার্মটা চলার সময় চামড়ায় ব্যারোইন করে যায় এবং একপ্রান্তে যেখানে উঁচু জায়গা থাকে তাকে আমরা মেডিকেলের ভাষায় প্যাট্রিউর বলি। অনেক সময় সেখানে পানি জমে যায়। যদি আমরা খুব সুক্ষ্ণভাবে দেখি বা ম্যাগনিফাইং লেন্স দিয়ে দেখি তাহলে আমরা দেখব চামড়ার ভেতরে কিছুটা গর্তের মতো আছে লম্বালম্বিভাবে। আর এর একপ্রান্ত একটু উঁচু এবং সেটা শক্ত ও পানিযুক্ত। আর মূল জার্মটা এখানে থাকে।
যে জীবাণু দ্বারা এই রোগ হয় সেই জীবাণু রাত্রি বেলা বেশি কাজ করে এবং দিনের বেলায় রেস্ট নেয়। আর রাতে তার কাজ হলো সারা শরীরে সে মুভমেন্ট করে এবং ডিম পাড়ে। আর এই যে চামড়ার সবচেয়ে ওপরের অংশে এই যে মুভমেন্ট করে যে জন্যে চুলকায় বেশি।
এ রোগের জটিলতাটা হচ্ছে- শরীর খুব চুলকায়-ফলে আমরা যখন চুলকাতে যাই তখন চামড়াটা হালকাভাবে ছিঁড়ে যায়। আর চামড়া ছিঁড়ে যাওয়ার ফলে সেটা ওপেন হয়ে যায় এবং এর ফলে বায়ুমণ্ডল বা পানিতে যেসব জার্ম , ব্যাকটেরিয়া বা অন্য জীবাণু ভেসে বেড়ায় তারা সেখানে প্রবেশ করতে পারে। সে অবস্থাকে আমরা তখন ইনফেকশন বলে থাকি। ফলে বলা চলে চুলকানির প্রথম জটিলতা হচ্ছে –ইনফেকশন।
আবার এই জীবাণু থেকে বেশ কিছু কেমিক্যাল তৈরি হয় যাকে আমরা মেডিকেলের ভাষায় বলি এন্টিজেন। আর এই কেমিক্যাল তৈরি হয়ে যাওয়ার কারণে পরবর্তীতে সেখানে একজিমা হয়ে যেতে পারে।
ফলে দ্বিতীয় জটিলতা হিসেবে আমরা বলতে পারি একজিমা হয়ে যেতে পারে। এছাড়া একটা সুনির্দিষ্ট জার্ম আছে সেটা দ্বারা যদি যদি কোনো ইনফেকশন হয় সেক্ষেত্রে পরবর্তীতে জটিলতা হিসেবে কিডনি আক্রান্ত হতে পারে এবং তা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
আর কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া খুব বড় ধরনের রোগ। এ রোগের চিকিতসা না করলে কিডনি নষ্ট হয়ে মৃত্যুর ঝুঁকি নেমে আসতে পারে। তবে চিকিতসার মাধ্যমে জটিল ওই রোগটিও সারিয়ে তোলা সম্ভব।